সব ইবাদত ও নেক আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের জন্য করা মুমিনের ওপর ওয়াজিব। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,
Advertisement
وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যেন শুধু আল্লাহর জন্য ইবাদত করে। (সুরা বায়্যিনাহ: ৫)
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
Advertisement
যে তার রবের সাথে সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। (সুরা কাহাফ: ১১০)
মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। আল্লাহর কাছে ওই আমলের সওয়াব নয়, বরং গুনাহ লেখা হয়। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন,
أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
আমি শরিককদের মধ্যে শিরক থেকে সবচেয়ে বেশি অভাবমুক্ত। যদি কেউ কোন আমল করে এবং তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরিক করে, তাহলে আমি তাকে ও তার শিরককে তাদের অবস্থায়ই ছেড়ে দেই। (সহিহ মুসলিম: ৭২০৫)
Advertisement
লোক দেখানো ইবাদতকারী যদি রিয়া বা তার লোক দেখানোর গুনাহ থেকে তওবা না করে, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সব মানুষের সামনে তাকে তার আমলের সওয়াব দেখাবেন এবং তার রিয়ার কথা প্রকাশ করে তাকে ওই সওয়াব থেকে বঞ্চিত ঘোষণা করবেন। সে সবার সামনে লজ্জিত হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ
যে ব্যক্তি লোক-শোনানো ইবাদত করে আল্লাহ তার ইবাদতের উদ্দেশ্য মানুষকে শোনাবেন। যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ইবাদত করে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ইবাদতের উদ্দেশ্য মানুষকে দেখাবেন। (সহিহ বুখারি: ৬৪৯৯)
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,مَنْ سَمَّعَ النَّاسَ بِعَمَلِهِ سَمَّعَ اللهُ بِهِ سَامِعَ خَلْقِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَحَقَّرَهُ وَصَغَّرَهُ
যে ব্যক্তি লোককে শোনানোর জন্য (সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে) আমল করবে আল্লাহ তার সেই (বদ নিয়তের) কথা সব সৃষ্টির সামনে (কেয়ামতের দিন) প্রকাশ করে তাকে লাঞ্ছিত করবেন। (তাবরানি ফিল কাবির: ১৪৯৩)
তাই নিজের ইবাদত প্রচার ও প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। আজকাল অনেকে ইবাদতের ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করে থাকে। এটা অপ্রয়োজনীয়, নিয়তের কারণে রিয়াও হয়ে যেতে পারে যার ভয়াবহতা ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট।
তবে প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছাড়াও অনেক ইবাদত মানুষকে প্রকাশ্যে বা মানুষের সামনেও করতে হয়। এতে কোনো সমস্যা নেই। শয়তান অনেক সময় মুমিনকে নেক আমল থেকে বিরত রাখার জন্য তার অন্তরে মন্ত্রণা দেয় যে, কাজটি সে করছে মানুষকে দেখানোর জন্য, আল্লাহর জন্য নয়। এ রকম কুমন্ত্রণা মনে আসলে এটাকে গুরুত্ব না দিয়ে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। এই কুমন্ত্রণার জন্য ভালো কাজ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
কোনো নেক কাজের মাঝখানে শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়া শুরু করলে যথাসম্ভব তা প্রতিহত করে নেক কাজটি শেষ করাই মুমিনের কর্তব্য। ইবনে আসির (রহ.) বলেন, বিশুদ্ধ নিয়তে কেউ কোনো কাজ শুরু করার পর শয়তান যদি ওয়াসওয়াসা দেয়, তুমি এটা মানুষকে দেখানোর জন্য করছো, তাহলে কুমন্ত্রণার কারণে ওই নেককাজটি ছেড়ে দিও না। (আন-নিহায়া ফি গারিবলি হাদিস ওয়াল আসার)
ওএফএফ/এএসএম