উপরে মুরগির খামার নিচে হচ্ছে মাছচাষ। সেই মুরগির বিষ্ঠা পড়ছে পানিতে, যা সরাসরি খাবার হিসেবে খাচ্ছে মাছ। এছাড়া বিষ্ঠায় দূষিত হচ্ছে পানি, ছড়াচ্ছে উটকো দুর্গন্ধ। অ্যামোনিয়া গ্যাসের মতো বিষাক্ত উপাদানও মিশছে মাছে। এসব মাছ খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তৈরি হচ্ছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে নিষেধাজ্ঞা আছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের। তারপরও দিন দিন এভাবে মাছচাষ বাড়ছে।
Advertisement
কিশোরগঞ্জের মাথিয়া এলাকার ফরুল বন্দের এ দৃশ্য কোনো পুকুরের উপরের দৃশ্য নয়। এ এলাকার কয়েকশ একর কৃষিজমি রূপান্তর করা হয়েছে মাছের খামারে এবং তার ওপর বসানো হয়েছে মুরগির শেড। জেনে না জেনে এভাবেই মাছ চাষ করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া এখানকার মৎস্য খামারে মাছের খাবার হিসেবে এলাকার বাইরে থেকে ট্রাকে মুরগির বিষ্ঠা আনা হচ্ছে। রাস্তার পাশে এগুলো ফেলে রাখায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীরা।
মুরগির বিষ্ঠায় দূষিত হচ্ছে পানি-ছবি জাগো নিউজ
জানা গেছে, ১০-১২ বছর আগেও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়নের মাথিয়া এলাকার ফরুল বন্দে ধান চাষ হতো। এখন আর ওই বন্দে ধান চাষের কোনো জমি অবশিষ্ট নেই। কিশোরগঞ্জ-নিকলী সড়কের দুপাশসহ পুরো বন্দে সারি সারি চোখে পড়বে ফিশারির ওপর কয়েকশ মুরগির শেড। যেখানে বছরে খামারিদের শতকোটি টাকার শুধু মাছের বাণিজ্য হয়। তবে এসব চাষের মাছ নিয়ে শঙ্কিত মৎস্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা। নিষেধাজ্ঞা এসেছে এই পদ্ধতির চাষের ওপর।
Advertisement
মুরগির জন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্য উপাদান ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে এখানে, যা বিষ্ঠা হয়ে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া এখানকার মৎস্য খামারের মাছের খাবার হিসেবে গাজীপুর থেকে ট্রাকে মুরগির বিষ্ঠা আনা হচ্ছে। রাস্তার পাশে এগুলো ফেলে রাখায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বিপজ্জনক এই পদ্ধতিতে মাছের চাষ হচ্ছে। কৃষিজমি খনন করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক মৎস্য খামার। প্রতিটি মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড। এখান থেকে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি মাছ উৎপাদন হচ্ছে। মুরগির জন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্য উপাদান ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে এখানে, যা বিষ্ঠা হয়ে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে। এছাড়া এখানকার মৎস্য খামারের মাছের খাবার হিসেবে গাজীপুর থেকে ট্রাকে আনা হচ্ছে মুরগির বিষ্ঠা। রাস্তার পাশে এগুলো ফেলে রাখায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।
আরও পড়ুন:
মুরগির বিষ্ঠায় মাছচাষ, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য বাড়ির উঠানে শখের রঙিন মাছ চাষে সফল রায়হানপথচারী আমেনা খাতুন জানান, এখন আর এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করার কোনো উপায় নেই। মুরগির বিষ্ঠার গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। আমরা চাই রাস্তা থেকে এগুলো সরিয়ে ফেলা হোক।
Advertisement
এলাকায় এই পদ্ধতিতে মাছচাষ বেড়েছে-ছবি জাগো নিউজ
মইজ উদ্দিন নামের স্থানীয় একজন বলেন, ১০-১২ বছর আগেও আমাদের এই বন্দে ধান চাষ করা হতো কিন্তু এখন আর ধান চাষ করার মতো জমি নেই সব ফিশারি হয়ে গেছে। এই সব ফিশারিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে উপরে মুরগির খামার। মুরগির লেদা খেয়েই এই মাছ বড় হচ্ছে। এই এলাকা দিয়ে এখন আর চলাচল করা যায় না মুরগির লেদা পানিতে পড়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এলাকার নূরে আলমের দাবি, এখান থেকে দূর হবে দুর্গন্ধ উৎপাদিত হবে নিরাপদ মাছ, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানি হবে।
আরও পড়ুন:
হারিয়ে যাচ্ছে দিনাজপুরের বিল-দেশি মাছ ফিডের দাম বাড়ায় বিপাকে মাছ চাষিরাস্থানীয় তরুণ হানিফ হোসেন জানান, শুনেছি এভাবে চাষের মাছ খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এলাকায় তো এভাবেই মাছ চাষ হয়ে আসছে। এই মাছ স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষই তো এই মাছ খাচ্ছে।
খরচ কম লাভ বেশি থাকায় এ পদ্ধতিতে ঝুঁকছে মানুষ-ছবি জাগো নিউজ
জমির মালিক রাব্বি হোসেন বলেন, ধান চাষ করলে খরচ দিয়ে আমাদের পোষায় না। আমরা জমি ভাড়ায় দিয়ে দিয়েছি। নিজেদের কোনো কাজ করতে হয় না। বছরে এই জমি বাবদ আমরা ভালো টাকা পেয়ে থাকি।
এভাবে মাছচাষ যে ক্ষতিকর এ বিষয়টি আমাদের কেউ কোনোদিন বলেনি। মুরগির শেড ছাড়া ফিশারিতে মাছ চাষ করলে মাছের খাবার অনেক বেশি লাগে। এতে আমাদের পোষায় না। এভাবে মাছ চাষ করলে মুরগির বিষ্ঠা খেয়ে মাছ বড় হয় অন্য খাবার কম লাগে। তাই এই এলাকার সবাই এভাবেই মাছ চাষ করছে। একইসঙ্গে দুটি চাষ হওয়ায় খরচ কমে আর লাভ বেশি হয়। এ কারণে আরও নতুন নতুন খামারি এই পদ্ধতিতে ঝুঁকছে।
ফিশারির উপরে মাছ চাষ করা খামারি হানিফ মিয়া জানান, এভাবে মাছচাষ যে ক্ষতিকর এই বিষয়টিই আমাদের কেউ কোনো দিন বলেনি। মুরগির শেড ছাড়া ফিশারিতে মাছচাষ করলে মাছের খাবার অনেক বেশি লাগে। এতে আমাদের পোষায় নয়। এভাবে চাষ করলে মুরগির বিষ্ঠা খেয়ে মাছ বড় হয়, অন্য খাবার কম লাগে। তাই এই এলাকার সবাই এভাবেই মাছচাষ করছে। একইসঙ্গে দুটি চাষ হওয়ায় খরচ কম হয় লাভও বেশি থাকে। এ কারণে নতুন নতুন আরও খামারি এই পদ্ধতিতে ঝুঁকছেন বলেও জানান তিনি।
মুরগির শেড থেকে ডিম বের করে আনছেন দৃশ্য-ছবি জাগো নিউজ
আরও পড়ুন:
শখ থেকে সফল মাছচাষি তুহিন ৯৩ দিনে বিঘাপ্রতি উৎপাদন ১০০ কেজিকিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এই পদ্ধতিতে চাষের ব্যাপারে একসময় মৎস্য অধিদপ্তর পরামর্শ দিলেও পরে গবেষণায় দেখা যায় এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এখন এই পদ্ধতির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব মাছ খেয়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই চাষ থেকে খামারিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন জেলা মৎস্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, মৎস্য খামারের ওপর যারা মুরগির শেড তৈরি করছেন তাদের কোনো প্রকার লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। এ পদ্ধতি থেকে ফিরে আসার জন্য আমরা খামারিদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।
কেআরএম/এসএইচএস/এমএস