ধর্ম

দুর্নীতিবাজের ইবাদত কি কবুল হয়?

রিজিক উপার্জনের জন্য হালাল উপায় অবলম্বন করা জরুরি। দুর্নীতি, অন্যায়, অসততা, জুলুম বা অন্য কোনো অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করা হারাম, ওই সম্পদ খাওয়া, পরা ও অন্যান্য প্রয়োজনে খরচ করাও হারাম। হাদিসে এসেছে, হারাম সম্পদ খেয়ে মানুষের শরীরে যে রক্ত-মাংস হবে, তা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। কাব ইবনে উজরা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

Advertisement

إِنَّهُ لاَ يَرْبُو لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلاَّ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِহারাম পস্থায় উপার্জিত সম্পদ দ্বারা সৃষ্ট ও পরিপুষ্ট মাংসের জন্য জাহান্নামের আগুনই উপযুক্ত। (সুনানে তিরমিজি: ৬১৪)

হারাম উপর্জনকারীর দোয়া কবুল হয় না। তার অন্যান্য ইবাদতও কবুল হয় না। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, লোকসকল! অবশ্যই আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই কবুল করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের যে নির্দেশ দিয়েছেন, একই নির্দেশ দিয়েছেন তার নবিদেরও। আল্লাহ তার নবিদের উদ্দেশে বলেছেন,يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيمٌহে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। (সুরা মুমিনুন: ৫১)

আল্লাহ তাআলা (মুমিনদের উদ্দেশে) বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْহে মুমিনগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর। (সুরা বাকারা: ১৭২)

Advertisement

তারপর আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে আলুথালু ধূলিমলিন বেশে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে দীর্ঘ করে তুলে দোয়া করে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’ কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় পোশাক হারাম এবং হারাম খেয়েই তার শরীর গঠিত হয়েছে। তাই তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে? (সহিহ মুসলিম: ২৩৯৩)

ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, আমলের পবিত্রতার জন্য খাদ্য-পানীয় পবিত্র ও হালাল হওয়া জরুরি। এ হাদিসে ইশারা রয়েছে যে, খাদ্য হালাল না হলে আমল কবুল হয় না। খাদ্য হারাম হলে আমল নষ্ট হয়ে যায়, আমল কবুল হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ শুধু পবিত্র আমলই গ্রহণ করেন’। তারপর তিনি উল্লিখিত দুটি আয়াত পাঠ করেছেন। এর অর্থ হলো আল্লাহর নবিদের ও মুমিনদের আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হালাল খাদ্য খেতে ও নেক আমল করতে। যতক্ষণ খাদ্য হালাল থাকে, ততক্ষণ নেক আমল কবুল হয়, খাদ্য হারাম হলে কীভাবে নেক আমল কবুল হবে? দোয়ার ক্ষেত্রে যা বলা হয়েছে তা আমলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যার খাদ্য-পানীয় হারাম, শরীর হারাম খাবারে গঠিত, তার দোয়া ও আমল কীভাবে কবুল হবে! (জামেউল উলুমি ওয়াল-হিকাম)

তাই আমাদের উপার্জন যেন হালাল হয়, অসততা, দুর্নীতি, জুলুম ও অন্যান্য অসদুপায়ে উপার্জিত না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। হালাল উপার্জনকারীর অল্প আমলের মূল্যও আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। হারাম উপার্জনকারীর অনেক বেশি আমলেরও কোনো মূল্য নেই। হারাম উপার্জনকারীর এমন নেক আমলগুলোরও কোনো মূল্য নেই যেগুলো সরাসরি হারাম সম্পদের সাথে সম্পর্কিত নয়। আর হারাম সম্পদ দ্বারা দান-সদকা ইত্যাদি আমলের যে কোনো মূল্য নেই তা সহজেই বোঝা যায়।

ওএফএফ/এএসএম

Advertisement