সাভারের নামাবাজার এলাকায় বংশী নদী দূষণ রোধ ও নদী দখল করে গড়ে ওঠা ৮৫০ অবৈধ স্থাপনা অবিলম্বে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ যথাযথ প্রতিপালন করে আগামী দুই মাস পর ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আবেদনকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বাকির হোসেন মৃধা। নদী কমিশনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বাকির হোসেন মৃধা।
এর আগে নদী কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দিয়ে জানানো হয়, বংশী নদীর জায়গায় ৮৫০টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এ আদেশ দেন আদালত।
সাভারের নামাবাজার এলাকায় বংশী নদী দূষণ ও অবৈধ দখলদারদের নিয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন ও সে অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর গত বছরের ১৮ জুলাই হাইকোর্টে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
Advertisement
আরও পড়ুন
দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে সাভারের নদী বংশী নদীতে ৮৫০ স্থাপনা: নদী রক্ষা কমিশনএর আগে ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন এক আদেশ দেন। ওই আদেশে বংশী নদীর ভেতরে সবধরনের ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। এছাড়া নদী দখল ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বংশী নদী রক্ষায় নির্দেশনা চেয়ে সাভারের এক আইনজীবীর করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছরেও আদালতের ওই আদেশ প্রতিপালিত হয়নি। উল্টো নদীর ভেতরে ও তীরে দখল অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়েছিল। ওই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দখল-দূষণে শেষ বংশী নদী’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘৬৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গিলে খাচ্ছে রাজধানীর উপকণ্ঠের সাভারের বংশী নদী। এ নদীর বিরাট এলাকা প্রভাবশালীদের দখলে থাকলেও উদ্ধারে উদ্যোগ নেই। নদীর মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে দেদারসে। এসব কারণে ভালো নেই সাভার উপজেলার ৪০ থেকে ৪২ লাখ বাসিন্দা।’ পরে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করেন সাভারের স্থানীয় বাসিন্দা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বাকির হোসেন মৃধা। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
Advertisement
আদেশে বংশী নদীর দূষণ বন্ধ এবং ৩০ দিনের মধ্যে দূষণ ও দখলদারদের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাভারের ভূমি কর্মকর্তা, ঢাকা জেলার এসপি ও সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ওই প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত।
পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে আরেক আবেদন করেন আইনজীবী বাকির হোসেন। ওই বছরের ২১ নভেম্বর বাকির হোসেন জানিয়েছিলেন, আদালতের আদেশ মতো প্রতিবেদন না দেওয়ায় আদালতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আবেদন করি। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আদালত অবমানার রুল জারি করেন।
আজ মঙ্গলবার বাকির হোসেন বলেন, ওই রুল জারির পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু ফের দখল করায় আদালত দখলমুক্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেন। ইউএনও এ প্রতিবেদন দাখিল না করায় তাকে তলব করেন আদালত।
এফএইচ/কেএসআর/এএসএম