রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মস্কোতে অবস্থান করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে পা রাখেন পুতিন। সে সময় মোদীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান রুশ প্রেসিডেন্ট।
Advertisement
পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এ সফর নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর, এই প্রথম ২২তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের অংশ হিসেবে রাশিয়ায় পা রাখলেন মোদী।
ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর এই শীর্ষ বৈঠক ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করছে ক্রেমলিন। রোববার (৭ জুলাই) ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর রুশ সফর নিয়ে ‘ঈর্ষান্বিত’।
Advertisement
এদিকে সোমবার মস্কোর বাইরে অবস্থিত নভো-ওগারিয়োভে রুশ প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে যান মোদী। সেখানে অনেক বিষয়ে মোদী ও পুতিনের মধ্যে একান্তে কথা হয়েছে। সে সময় তারা বেশ খোশমেজাজে সময় কাটিয়েছেন। একটি বারান্দায় বসে তারা চা পান করেছেন, গলফ কার্টে চড়ে একসঙ্গে আস্তাবল পরিদর্শন করেন। তাদের আলাপচারিতা আনুষ্ঠানিক না হলেও এই সময়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মত বিনিময় হয়েছে দুই রাষ্ট্রনেতার।
ছবি: এএফপি
প্রধানমন্ত্রী মোদী পুতিনকে বলেছেন, তার সঙ্গে সাক্ষাতের এই সময়টা বেশ আনন্দের মুহূর্ত ছিল। তার সঙ্গে এভাবে সময় কাটানোর পরিকল্পনা জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
পুতিনের সঙ্গে আলিঙ্গন করার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে মোদী বলেন, আগামীকালও আমরা বৈঠকে বসতে যাচ্ছি। এটা অবশ্যই ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে এবং অনেক দূর এগিয়ে নেবে। ভারতের কাছে কম দামে তেল এবং অস্ত্র সরবরাহকারী গুরুত্বপূর্ণ দেশ হচ্ছে রাশিয়া।
Advertisement
ছবি: এএফপি
অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে পশ্চিমা দেশগুলো। চির শত্রু মস্কোর কাছ থেকে ভারতকে দূরে থাকতে চাপও দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশগুলো।
এছাড়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে। পশ্চিমা অনেক দেশই মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। তবে ভারত সরাসরি কখনোই রাশিয়া বিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এছাড়া মোদীর এই সফরের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে ভারতীয় তরুণদের যুদ্ধ করার ইস্যুটি।
ছবি: এএফপি
গত কয়েক মাসে বহু দেশ থেকেই তরুণদের নিজেদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে প্রচুর ভারতীয়ও আছেন। তাদের অনেককেই কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ভারতীয়র মৃত্যুও হয়েছে।
ছবি: এএফপি
অনেক ভারতীয় নাগরিক সেখানে আটকা পড়ে আছেন। তবে এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপরেই রুশ সেনাবাহিনীতে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রেমলিন। এটাকে ভারতের জন্য বড় একটি কূটনৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিনের সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন মোদী। রুশ সেনাবাহিনীতে থাকা ভারতীয়দের অব্যহতি দিয়ে তাদের দেশে ফেরানোর দাবি জানান তিনি। তার এই আবেদনে সাড়া দিয়ে এ বিষয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ক্রেমলিন।
টিটিএন