ফ্রান্সে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে বামপন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) জয়ী হলেও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দেশটির নতুন সরকার গঠন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এনএফপিকে এখন হয় কমসংখ্যক আসন নিয়ে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হবে নয়তো অন্য দলের সঙ্গে জোট হয়ে ক্ষমতায় যেতে হবে।
Advertisement
তবে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করা হলে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে। ফলে তারা কোনো আইন পাস করতে চাইলে অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হবে। সে কারণে এখন সবকিছু মিলিয়ে এবারের নির্বাচন ফ্রান্সকে বেশ বিপাকে ফেলেছে বলা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপাতত নিজ পদেই দায়িত্ব পালনের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল অ্যাটালকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো। সোমবার পদত্যাগপত্র নিয়ে ম্যাক্রোঁর কাছে যান গ্যাব্রিয়েল। তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদেই আপাতত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
ফ্রান্সের পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা ৫৭৭টি। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে এনএফপি পেয়েছে ১৮২টি আসন, ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোট ১৬৮টি এবং উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) পেয়েছে ১৪৩টি আসন। ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৮৯টি আসন। কিন্তু কোনো দলই এর ধারেকাছে যেতে পারেনি।
Advertisement
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ফ্রান্সের জনগণ আবারও জানিয়ে দিলো যে, তারা কট্টর ডানপন্থীদেরকে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছিল ডানপন্থীরা। এমনকি ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রথম দফায় এগিয়ে ছিল তারা।
কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল, সেখানেই পিছিয়ে পড়েছে কট্টর ডানপন্থিরা।
প্রথম দফায় ডানপন্থিদের জয়ের পর দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আগেই বামপন্থি এবং মধ্যপন্থি নেতারা নড়েচড়ে বসেন। ডানপন্থিদের ঠেকাতে ফ্রান্সের মধ্যপন্থি ও বামপন্থি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর জোটের নির্বাচনী প্রচারণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল অ্যাটেল।
এরপর আপসের ভিত্তিতে বাম ও মধ্যপন্থি দলগুলোর প্রার্থীদের অনেকেই একে অন্যকে একাধিক আসন ছেড়ে দেন। আর এর ফলেই ডানপন্থিরা পিছিয়ে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কট্টর ডানপন্থী কোনো দল ফ্রান্সের ক্ষমতায় বসতে পারেনি।
Advertisement
নিউ পপুলার ফ্রন্টের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের পাশ করা পেনশন ও অভিবাসন বিষয়ক সংশোধিত আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনা এবং ভিসা আবেদনের বন্দোবস্ত করার জন্য একটি সহায়তাকারী সংস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জীবনযাপনের ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করা এবং ন্যূনতম বেতন বাড়ানোরও ঘোষণাও দিয়েছে বামপন্থীদের নতুন এই জোট।
এদিকে মঙ্গলবার ন্যাটো সম্মেলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিচ্ছেন ম্যাক্রোঁ। এছাড়া আগামী ২৬ জুলাই অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করতে যাচ্ছে প্যারিস। তবে এখনই বলা যাচ্ছে না যে, গ্যাব্রিয়েল অ্যাটেলকে আর কতদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ফ্রান্সের বিদায়ী অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মায়ার সোমবার সতর্ক করেছেন যে, দেশ আকস্মিকভাবে আর্থিক সংকট এবং অর্থনৈতিক পতনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
টিটিএন