সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এ পদের মৌখিক পরীক্ষা আগামী ১৩ জুলাই শুরু হবে। মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতির কৌশল ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল ইসলাম—
Advertisement
ভাইভার দিন শুরুতেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়ে হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট-১ এর পরিচালক মহোদয় বরাবর স্বহস্তে লিখিত একটি আবেদনপত্র জমা দেবেন। এ ছাড়া সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট, লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র, কাউন্সিলর কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদ, বিবাহিতদের স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র তথা এনআইডি, চাকরিরত প্রার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অনাপত্তিপত্র তথা এনওসিসহ বিজ্ঞপ্তিতে যাচিত যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে যাবেন। কোনো ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকলে ভাইভার আগে তা আপনার ওপর অহেতুক চাপ তৈরি করবে, যা আপনার নাম্বারেও প্রভাব ফেলবে।
পোশাক-পরিচ্ছদপরিপূর্ণরূপে ফর্মাল হয়ে ভাইভা বোর্ডে যাবেন। যা আপনাদের আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে। সাদা, আকাশি অথবা যে কোনো লাইট কালারের শার্ট, কালো বা নেভি ব্লু প্যান্ট, কালো বা অক্সফোর্ড ব্লু কালারের ব্লেজার, সাথে মার্জিত টাই পরবেন। জুতা এবং বেল্ট একই কালারের হলে ভালো হবে। ক্লিন শেভড অবস্থায় যাবেন অথবা যারা সুন্নতি দাড়ি রাখেন, তারা দাড়ি নিয়েই যাবেন। মেয়েরা মার্জিত জামদানি শাড়ি অথবা সালোয়ার কামিজ পরে ফর্মাল ভাবেই যাবেন।
নিজের সম্পর্কেভাইভা বোর্ডে একজন ডেপুটি গভর্নর স্যারের নেতৃত্বে ৪-৫ জনের একটি প্যানেল থাকবে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডি ও ডিরেক্টর লেভেলের স্যাররা থাকবেন। প্রথমেই ‘Introduce Yourself’ বা ‘আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন’ প্রশ্নটি করা হয়ে থাকে। তবে আগে থেকে গুছিয়ে না রাখার কারণে অনেক প্রার্থীই এ সময় নিজের সম্পর্কে সঠিকভাবে কী কী বলা জরুরি তা গুলিয়ে ফেলেন। আপনাকে যদি বাংলায় প্রশ্নটি করা হয়, বাংলায় উত্তর দেবেন। আর যদি ইংরেজিতে করা হয়, তবে ইংরেজিতে বলবেন। আপনার নাম, অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, আপনার পঠিত বিষয়, নিজ জেলা ও আপনার সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসের সাথে কয়েকটি কথা বলবেন। আগেই উত্তরটি গুছিয়ে রাখবেন যেন জড়তা না থাকে। মনে রাখবেন এই ফাস্ট ইম্প্রেশনটা আপনার পুরো ভাইভাতে প্রভাব ফেলবে।
Advertisement
অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় ভাইভাতে অনেক গুরুত্ব বহন করবে। আপনি যদি কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড যেমন- ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, ব্যাংকিং, অর্থনীতি—এসবের ছাত্র হয়ে থাকেন, তবে ভাইভা বোর্ডে আপনাকে এসব বিষয়ে অনেক গভীর থেকে যাচাই করা হতে পারে। তবে আপনি যদি সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হন, তবে এসব বিষয়ে খুব বেশি জটিল প্রশ্ন না করে বরং আপনি কেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসতে চান এবং আপনার সাবজেক্টের সাথে ব্যাংকিংয়ের সম্পর্ক কি—এই দুটি কমন প্রশ্ন করা হতে পারে। তাই এগুলোর উত্তর আগেই গুছিয়ে ভাইভা বোর্ডে ঢুকবেন।
এলাকা, বিখ্যাত ব্যক্তি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটআপনার এলাকা অর্থাৎ জেলা ও বিভাগের বিষয়ে বিশদভাবে সব জেনে নেবেন। আপনার এলাকার নামকরণ, কোনো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকলে তার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখবেন। মুক্তিযুদ্ধে আপনার এলাকা কোন সেক্টরের মধ্যে ছিল—তাও জানবেন এবং সেখানকার বিখ্যাত কোনো রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি থাকলে তাদের অবদান ও সামগ্রিক দিক সম্বন্ধেও ভালোভাবে জেনে যাবেন। আপনার পঠিত স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটির নামের সার্থকতাও জিজ্ঞেস করা হতে পারে। তাই এসব বিষয় ভালোভাবে ধারণা নিয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি কেমন হবে? বিসিএস লিখিত: বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের দশ পরামর্শ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুবাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকই নয়, সব ভাইভা বোর্ডের পছন্দের টপিক। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যাবতীয় ইতিহাস ক্রমানুসারে মনে রাখার চেষ্টা করবেন। সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম, মুজিবনগর সরকার এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও অবদানসমূহ স্পষ্টরূপে জেনে নেবেন। যা আপনাকে ভাইভা বোর্ডে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে।
ব্যাংকিং বিষয়ক জ্ঞানআপনি যে ব্যাকগ্রাউন্ডেরই হোন না কেন ব্যাংকিং বিষয়ে বেসিক কিছু প্রশ্ন এবং রিসেন্ট ব্যাংকিং সেক্টরের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ ভাইভা বোর্ডে করা হবেই। বর্তমানে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা, ডিজিটাল ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকের নাম, বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহ, বিদেশি ব্যাংক, কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া ব্যাংক মার্জারগুলো, কিছু ব্যাংকিং টার্ম যেমন- CRR, SLR, Repo rate, Reverse repo rate, policy rate (বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বিদ্যমান), BEFTN, SWIFT, NPSB, RTGS, BACPS, BACH, NPL, ATM, Classified Loan, বিভিন্ন ব্যাংক স্কিম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা স্কিম যেমন- ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভাগসমূহ ও তাদের কার্যক্রম-সচিবদের নাম, মানিটারি পলিসি, ফিসক্যাল পলিসি—এসব পলিসির উপাদান, কারা এসব বাস্তবায়ন করেন, কীভাবে বাজেটের ঘাটতি পূরণ করা হয়—এসব বিষয়ে জানতে হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশ, রকেট, নগদ—এগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাংশন, বিভিন্ন সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড, সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ব্যাংকের নানাবিধ পলিসি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সেন্ট্রাল ব্যাংকের পদক্ষেপ প্রভৃতি নিয়ে প্রশ্ন আসাটা কমন।
Advertisement
ভাইভা বোর্ডে সম্প্রতি দেশে ও বিদেশে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চাওয়া হতে পারে। সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত, এসব যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের অবস্থান, বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রিজার্ভ সংকট, বাজেট ২০২৪-২৫, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিশেষ করে প্রত্যয় স্কিমের বিস্তারিত, ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট, ব্যাংকিং সেক্টরের ঋণখেলাপী, অর্থপাচার, বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্টগুলো, আইএমএফের ঋণ ও আরোপিত শর্তাবলি, ঘূর্ণিঝড় রেমাল, টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২৪—যাবতীয় রিসেন্ট টপিক ভালোভাবে জেনে যাবেন। ভাইভার দিনের বাংলা সাল ও তারিখ জেনে যাবেন। ভাইভার দিনের পত্রিকার হেডলাইনগুলো চোখ বুলিয়ে নেবেন।
যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবেভাইভা বোর্ডে অবশ্যই সালাম দিয়ে আদবের সঙ্গে প্রবেশ ও প্রস্থান করবেন। সব সময় একটি হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ধরে রাখবেন। এটি আপনার প্রতি একটি পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করবে। কখনো বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না। কোনো ইস্যুতে বিতর্কিত কোনো জবাব দেবেন না। কিছু না পারলে অথবা আপনি সহমত না হলে ‘সরি স্যার’ বলে দেবেন অথবা ‘আমাকে বিষয়টি আরও একটু জানতে হবে’ বা ‘এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না’—এমন বলবেন। বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে তর্কে জড়ানো নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মতো একটি বিষয়।
এসইউ/জিকেএস