ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে রোদ ঝড় বৃষ্টিতে সাধারণ যাত্রীরা যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সেজন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করেছে। যানবাহনের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীরা এসব ছাউনিতে বসে বিশ্রাম নেন। কিন্তু সড়কের সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য তৈরি করা এসব যাত্রী ছাউনিগুলোর বেশিরভাগই এক শ্রেণির লোকজন দখল করেছেন।
Advertisement
ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের কালিকাপ্রসাদ বাসস্ট্যান্ডে তিনটি যাত্রী ছাউনি রয়েছে এবং আকবরনগর-মিরারচর বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে দুইটি যাত্রী ছাউনি। একই ইউনিয়নে পাঁচটি যাত্রী ছাউনি রয়েছে। কিন্তু এসব যাত্রী ছাউনিগুলো অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ও আকবরনগর মিরারচর বাসস্ট্যান্ডের তিনটি যাত্রী ছাউনির মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের নির্মাণ করা ছাউনি দখল করে দুইটি ফলের দোকান বসেছে। এর ফলে ছাউনির ভেতর ও বাহিরে যাত্রী বসার ও দাঁড়ানোর পরিবেশ নেই। এই ছাউনির পেছনে শাটারযুক্ত দুইটি দোকানও রয়েছে। ওই দুটি দোকান প্রতিবছর ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে দুই বছরের চুক্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইউছুফ খান ও জুয়েল মিয়া ভাড়া নিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যান মো. লিটন মিয়া বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর জরাজীর্ণ ছাউনিটি সংস্কার করে পরিষদের উন্নয়নের জন্য নিয়মনীতি অনুসরণ করে দোকান দুটি ভাড়া দেন।
Advertisement
ওই দোকান দুটি দুই ফল ব্যবসায়ী আনুমানিক ৪ মাস আগে ভাড়া নেন। কিন্তু তারা দোকানের সামনের অংশ যাত্রী ছাউনি পুরোপুরি দখল করে ফলের ব্যবসা করছেন এবং দোকান দুটিকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছেন।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী আরও দুটি যাত্রী ছাউনি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ওই দুটি ছাউনির একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশার গ্যারেজের সামনে অটোরিকশা মেরামত করতে দেখা গেছে এবং অন্যটি একটি টিভি ফ্রিজের দোকানের সামনে থাকায় দোকানের মালামাল রাখার কারণে যাত্রী বসার মতো কোনো পরিবেশ নেই বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এছাড়াও আকবরনগর-মিরারচর বাসস্ট্যান্ডের দুটি যাত্রী ছাউনির মধ্যে একটি ছাউনির সামনে একটি নার্সারির গাছ রাখা হয়েছে এবং অপরটির সামনে একটি পিঠার দোকান রয়েছে। ফলে যাত্রীদের বসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও একটি যাত্রী ছাউনির পেছনে থাকা দুটি দোকানের পণ্যভর্তি বস্তা রাখার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিটন মিয়া জানান, কালিকাপ্রসাদ বাসস্ট্যান্ডের একটি যাত্রী ছাউনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন যাবত ছাউনিটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। সেখানে আগে চা স্টল ছিল। পরবর্তীতে তিনি যাত্রী ছাউনিটি সংস্কার করেন। ছাউনির পেছনের সাইডে দুটি দোকান রয়েছে।
Advertisement
তিনি জানান, ওই দোকানগুলো মূলত দুজন ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির কারণে তারা কয়েকদিন ধরে দোকানের সামনের অংশ ছাউনিতে ফলের দোকান সাজিয়ে বসেছেন। এ বিষয়ে তিনি দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলবেন তারা যেন দোকানের ভেতরে তাদের ব্যবসা সীমাবদ্ধ রাখেন।
যাত্রী ছাউনিতে ফলের পসরা সাজিয়ে বসা জুয়েল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমরা পেছনের দুটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। সামনে খালি পড়েছিল, তাই ব্যবসা করছি।
কালিকাপ্রসাদ এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার বাসস্ট্যান্ডে দুটি যাত্রী ছাউনিতে ফলের দোকান দখল করে ব্যবসা করছে। ঝড় বৃষ্টির দিনে সড়কের যাত্রীরা নিজেদের রক্ষা করতে ছাউনিটি ব্যবহার করতে পারছেন না। এলাকার কিছু লোক প্রভাব খাটিয়ে দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে।
মিরারচর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, যাত্রী ছাউনিতে যাত্রীরা বিশ্রাম নেবে এবং সেখানে বসে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকবে। কিন্তু সেসব ছাউনি দখল হয়ে আছে। দখলকৃত যাত্রী ছাউনিগুলো যাত্রীদের ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিলা বিনতে মতিন জানান, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের যাত্রী ছাউনিগুলো দখলের অভিযোগ পেয়েছি। এসব বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এফএ/জেআইএম