শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জাতীয় বেতন গ্রেডের নবম (এর ওপরেরও) থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। সে অনুযায়ী, ৩৯তম বিশেষ বিসিএস পর্যন্ত কোটা বহাল ছিল। মূলত, ৪০তম বিসিএস থেকে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।
Advertisement
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। তবে কোটা বাতিলের পরও সিভিল সার্ভিসে নিয়োগে নারীদের ক্ষেত্রে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। কোটা বাতিলের আগে-পরে ১০টি বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোটা বাতিলের আগে ও পরে নারীদের নিয়োগের হারে খুব একটা পার্থক্য নেই।
কিন্তু সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ে কোটা বাতিলের সেই পরিপত্র বাতিল বলে জানা যাচ্ছে। পরিপত্র বাতিল হলে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সঙ্গে নারী কোটাও ফেরার কথা। তবে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফেরার খবরে আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেশের অন্যান্য স্থানেও এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন তারা
Advertisement
এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফেরার খবরে আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেশের অন্যান্য স্থানেও এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন তারা।
আরও পড়ুন কী ছিল আলোচিত ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনে? কোটা বণ্টনে সংস্কার জরুরি, সমাধানের সূত্র সরকারের হাতেই যেভাবে বাতিল হয়েছিল কোটাপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (৭ জুলাই) সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা উচিত জানিয়ে বলেন, আজকে আন্দোলনের নামে যেটা আবার করা হচ্ছে, পড়াশোনার সময় নষ্ট করা, এটার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
কোটা বাতিলের আগে-পরে ১০ বিসিএসে নারী নিয়োগের চিত্রগত ১০টি বিসিএসের নিয়োগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সময়ই নারীদের নিয়োগের হার ২৪ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে। বিশেষ বিসিএস ছাড়া কোটা পদ্ধতি বাতিলের আগে ও পরেও এ হার বজায় ছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কোটা পদ্ধতি বহাল থাকা অবস্থায় ৩৩তম বিসিএসে মোট আট হাজার ৩১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে তিন হাজার ২১২ জন নারী। নারী নিয়োগের হার ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। ৩৪তম বিসিএসে নারী নিয়োগের হার ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। ওই বিসিএসে নিয়োগ দেওয়া দুই হাজার ১১৭ জনের মধ্যে নারী ৭৫৪ জন।
Advertisement
১০টি বিসিএসের নিয়োগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সময়ই নারীদের নিয়োগের হার ২৪ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে। বিশেষ বিসিএস ছাড়া কোটা পদ্ধতি বাতিলের আগে ও পরেও এ হার বজায় ছিল
৩৫তম বিসিএসে মোট দুই হাজার ১২৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে নারী নিয়োগ পেয়েছেন ৫৯৫ জন, যা মোট নিয়োগের ২৮ শতাংশ। ৩৬তম বিসিএসেও বহাল ছিল কোটা। এ বিসিএসে ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ নারী নিয়োগ দেওয়া হয়। ৩৬তম বিসিএসে নিয়োগ দেওয়া দুই হাজার ২৫৫ জনের মধ্যে নারী ছিলেন ৫৮৪ জন।
আরও পড়ুন ১২ বছরে সব নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠু হয়েছে, এটি প্রমাণিত: পিএসসি বিসিএসে একবার আবেদন করলেই দেওয়া যাবে পরের সব পরীক্ষা বিসিএসে নারীরা পিছিয়ে নয় বরং এগিয়ে যাচ্ছে: জনপ্রশাসনমন্ত্রী৩৭তম বিসিএসে ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ নারী নিয়োগ পান। এ বিসিএসে মোট এক হাজার ২৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যেখানে ৩০৯ জন নারী। ৩৮তম বিসিএসে মোট দুই হাজার ১৩৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৫৭৪ জন নারী নিয়োগ পান। যেখানে নারীদের নিয়োগ দেওয়ার হার ২৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
সবশেষ ৩৯তম বিশেষ বিসিএস পর্যন্ত কোটা বহাল ছিল। এ বিসিএসে ছয় হাজার ৭২৭ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে নারী ছিলেন তিন হাজার ১৩৬ জন। এ বিসিএসে ৪৬ দশমিক ৬১ শতাংশ নারী নিয়োগ পান।
এরপর ৪০তম বিসিএস থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়। এ বিসিএসে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ নারী নিয়োগ পান। মোট নিয়োগ পাওয়া এক হাজার ৯৬৩ জনের মধ্যে নারী ছিলেন ৫১১ জন। ৪১তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী নিয়োগ পান। এ বিসিএসে মোট দুই হাজার ৫১৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে নারী ছিলেন ৬৭২ জন।
১০ শতাংশ নারী কোটা বাতিলের পরও নারীরা আগের মতোই নিয়োগ পাচ্ছেন। এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ৪০তম বিসিএস থেকেই কিন্তু নারীদের কোনো কোটা নেই। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিসিএসে নারীদের নিয়োগ পাওয়ার হার কমেনি।- জনপ্রশাসনমন্ত্রী
সবশেষ ৪২তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগের গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোটা অনুসরণ ছাড়া এ বিসিএসে চার হাজার জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে নারী ছিলেন এক হাজার ৯৬১ জন, যা মোট নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ৪৯ দশমিক ০২ শতাংশ। যদিও ওই বিসিএসে তিন হাজার ৯৫৭ প্রার্থীর নামে এ গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। পিএসসি যে সুপারিশ করেছিল, সেখান থেকে ৪৩ প্রার্থী চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়েন।
৪৩তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে দুই হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে পিএসসি। তাদের মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ৪২১ জন। বাকি এক হাজার ৭৪২ জনই পুরুষ। শতাংশের হিসাবে নারীদের এ বিসিএসে নিয়োগের হার মাত্র ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পিএসসির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিয়োগ দিয়ে এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এটিই হবে সম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে নিয়োগে নারীদের সর্বনিম্ন হার।
আরও পড়ুন শাহবাগ থেকে ফার্মগেট শিক্ষার্থীদের দখলে, চলছে মুহুর্মুহু স্লোগান কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরতে বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার ১৭ জনের পরিচয় যা জানা গেলোএ বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আপনারা যদি আমাদের পরিসংখ্যান দেখেন, বুঝতে পারবেন যে নারীরা পিছিয়ে যাচ্ছেন না, বরং এগিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ৩৫তম বিসিএসে নারী কর্মকর্তা রয়েছেন ২৮ শতাংশ। ১০০ জনের মধ্যে নারী ২৮ জনের মতো। ৩৬তম বিসিএসে আমরা দেখেছি নারী কর্মকর্তা ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ। ৩৭তম বিসিএসে দেখেছি ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ৩৮তম বিসিএসে ২৬ শতাংশ। ৪০তম বিসিএসে দেখেছি নারীদের হার ২৬ শতাংশ। সবশেষ ৪১তম বিসিএসে ২৬ নারী প্রার্থী পদায়নের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
‘১০ শতাংশ নারী কোটা বাতিলের পরও নারীরা আগের মতোই নিয়োগ পাচ্ছেন। এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ৪০তম বিসিএস থেকেই কিন্তু নারীদের কোনো কোটা নেই’- যোগ করেন মন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, এতে বোঝা যাচ্ছে, বিসিএসে নারীদের নিয়োগ পাওয়ার হার কমেনি। প্রতিটি বিসিএসে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ নারী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। সেটি কিন্তু তারা ধরে রেখেছেন, সেখানে কোনো ব্যত্যয় নেই।
নারীরা কোনোরকম পিছিয়ে যাচ্ছেন না, বরং সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন দাবি করে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, ক্যাডার সার্ভিস ছাড়াও সবমিলিয়ে সরকারি চাকরিতে ২৯ শতাংশ নারী রয়েছেন।
আরএমএম/এমকেআর/জিকেএস