ধর্ম

নবিজির (সা.) যুগে যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিল একদল জিন

সুরা জিন‌ কোরআনের ৭২তম সুরা; এর আয়াত সংখ্যা ২৮ এবং রুকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২। সুরা জিন মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

Advertisement

এ সুরা নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কোরআন নাজিল শুরু হওয়ার পর জিনদের আসমানি খবরাখবর শোনার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করা হয়। আকাশের কাছে পৌঁছলেই তাদের লক্ষ করে অগ্নিপিণ্ড ছোড়া হতো। জিনরা তখন বুঝতে পারে পৃথিবীতে কোনো নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই এটা হচ্ছে। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে এর কারণ খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে।

তাদেরই একটি দল নাখলা নামক স্থানে এসে উপস্থিত হয়। সেখানে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ সময় সাহাবিদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। জিনদের ওই দলটি নামাজে নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোরআন পাঠ মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং বলে, আসমানি খবরাখবর শুনতে আমাদের বাধা দেওয়ার কারণ মূলত এটিই। তারপর তারা তাদের জাতির কাছে ফিরে গিয়ে বলে, আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এর ওপর আমরা ইমান এনেছি। আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরিক করব না।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তার নবির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওপর নাজিল করেন, ‘বলুন, আমার প্রতি ওহি প্রেরিত হয়েছে যা জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।’ (সহিহ বুখারি: ৪৯২১)

Advertisement

সুরা জিনের ১-৫ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, বলুন, আমার প্রতি ওহি নাজিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে কোরআন শুনেছে, তারপর তারা বলেছে, আমরা বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি; যা সঠিক পথ প্রদর্শন করে। আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের রবের সাথে কাউকে শরিক করব না। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের রবের মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তিনি কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং তার কোনো সন্তান নেই। আমাদের মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে অবাস্তব কথাবার্তা বলত। অথচ আমরা মনে করতাম, মানুষ ও জিন কখনও আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না। (সুরা জিন: ১-৫)

আল্লাহ তাআলা বলেন, আর কিছু মানুষ কিছু জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা ধারণা করতো যেমন তোমরা (মানুষরা) ধারণা কর যে, আল্লাহ কাউকে কখনই পুনরুত্থিত করবেন না। (সুরা জিন: ৬, ৭)

এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:

১. আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাাল্লাম) যেমন সমগ্র মানবজাতির কাছে প্রেরিত আল্লাহর রাসুল, তিনি জিনজাতির কাছেও প্রেরিত রাসুল। জিনজাতিরও কর্তব্য তার আনিত দীন অনুসরণ করে এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনা এবং নেক আমল করা। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,

Advertisement

وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ

আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে। (সুরা জারিয়াত: ৫৬)

২. কোরআন আল্লাহর কালাম। কোরআনের আয়াতগুলোতে অলৌকিক মাহাত্ম ও পবিত্রতা ফুটে ওঠে। জিনরা কোরআন শুনেই বুঝতে পেরেছিল এটা মানুষের বানানো কথা নয়।

৩. আল্লাহর একত্বে নির্ভেজাল বিশ্বাস ইমানের প্রধান শর্ত। আল্লাহর স্ত্রী বা সন্তান আছে বলে বিশ্বাস করলে মানুষ মুমিন থাকে না। আল্লাহর স্ত্রী-সন্তান নেই; তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি।

৪. মানুষের মতো অনেক জিনও আল্লাহর ওপরে মিথ্যা আরোপ করে যে কারণে আখেরাতে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

৫. জিনের আশ্রয় গ্রহণ করা, জিনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হারাম। মুসলমানরা শুধু আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে এবং তার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে মুশরিকরা যখন সফরে কোথাও যেত, তখন যে উপত্যকায় তারা অবস্থান করত, সেখানকার জিনদের কাছে আশ্রয় কামনা করত; যেমন কোনো অঞ্চলের বিশেষ ব্যক্তি এবং সরদারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়।

ওএফএফ/এমএস