বগুড়ায় প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা এবং বাঙালি নদীর পানি বেড়েই চলেছে। শনিবার বিকেলে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বেড়ে নিচু এলাকার বাড়িঘর, রাস্তা ও ফসলি জমিতে প্রবেশ করেছে।
Advertisement
বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দির বাঁধের পূর্ব পাড়ের ১৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ওইসব অঞ্চলের সাড়ে ২২ হাজার পরিবারের ৭৮ হাজার ৩২৩ মানুষ পানিবন্দি। তারা নৌকায় চলাচল করছে। এমনটি জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় প্রবল স্রোত ও ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সারিয়াকান্দির ইছামারা, হাটশেরপুর, কর্ণিবাড়ি, সোনাতলার সুজাইতপুর এবং ধুনটের শহড়াবাড়ি বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ইছামারায় ৫০০ মিটার, হাটশেরপুরে ৩০০ মিটার এবং কর্ণিবাড়িতে ১০০ মিটার এলাকা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এর আগে শহড়াবাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্পারের পাশে ৩৫০ বিঘা আয়তনের চর জেগে উঠেছিল। ভাঙনের মুখে এর তিন ভাগের একভাগ রয়েছে। এছাড়া বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। সারিয়াকান্দির কাজলা ইউনিয়নের টেংরাকুরায় পানির তোড়ে রাস্তা ভেঙে গেছে। এতে বন্যার পানি ঢুকে পড়ছে গ্রামে। গ্রামবাসী নানাভাবে পানি ঢোকা বন্ধের চেষ্টা করছেন।
এদিকে, সোনাতলা উপজেলার তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের চর সরুলিয়া, খাবুলিয়া, চর মহনপুর, পূর্ব তেকানী, মহব্বতেরপাড়া ও জন্তিয়ারপাড়া এবং পাকুল্লা ইউনিয়নের রাধাকান্তপুর, আচারেরপাড়া, খাটিয়ামারী, পূর্ব সুজাইতপুর ও বসুনিয়াপাড়ার বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসায় পানি ঢুকে পড়ায় সেখানে বন্ধ হয়ে গেছে পাঠদান। পানিবন্দি মানুষের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সংকট শুরু হয়েছে।
Advertisement
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির জানান, শনিবার দুপুর ৩টায় যমুনার পানি সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে শুক্রবার বিকেল ৩টায় সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া যমুনার বিপৎসীমা ১৬ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। শনিবার দুপুর ১২টায় ৫৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৬ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান জানান, শুধু সারিয়াকান্দিতে ১০৮৫ হেক্টর জমির আউস ধান, ভুট্টা, পাট ও সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছন। তিনি সোনাতলা উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ৫০ টন চাল বিতরণ করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি সারিয়াকান্দিতে ১০০ টন চাল বন্য দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।
শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের শালুকা গ্রামে বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
Advertisement
এ গ্রামের ৪০০ পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল এবং ২০০ পরিবারে মাঝে চাল, ডাল, তেল, আটা, পেঁয়াজসহ শুকনা খাবার প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে। যতদিন বন্যা আছে ততদিন ত্রাণ দেওয়া হবে।
জেডএইচ/জেআইএম