বাবার চেহারাটা পরিষ্কার মনে নেই। কারণ আমার ৪ বছর বয়সেই তো বাবা নিখোঁজ হয়েছেন। আজ ২৫ বছর বয়সেও বাবাকে খুঁজে চলেছি। কথাগুলো বলতে বলতে বার বার কাঁদছিলেন নড়াইল থেকে পাবনার চাটমোহরে বাবাকে খুঁজতে আসা রুপা খাতুন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে চাটমোহর উপজেলা গেট এলাকায় দেখা যায় তাকে। রুপা নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তার বাবার নাম নুর ইসলাম মোল্লা।
রূপা খাতুন বলেন, ‘আমার বয়স যখন চার বছর তখন বাবা সবজি বিক্রি করতে খুলনায় যান। এরপর আর ফেরেননি। তার কানো ছবিও নেই। চেহারাও পরিষ্কার মনে নেই। বাবার কথা যখন কেউ জিজ্ঞেস করে কলিজা ছিঁড়ে যায়। শ্বশুর বাড়িতে বাবার প্রসঙ্গ উঠলেই কটু কথা শোনায়। অথচ বাবা আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। নানা বাড়ি এলাকায় থেকে ব্যবসা করেছেন। কত মানুষ চেনে তাকে। সব সময় তার কথা মনে পড়ে। এ বয়সে এসে খুব বেশি মনে পড়ছিল। তাই খুঁজতে খুঁজতে বাবার গ্রামের বাড়ি চাটমোহরে এসেছি।'
জানা গেছে, তার বাবা নুর ইসলাম মোল্লার বাড়ি পাবনার চাটমোহরে। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে তার বাবা চাটমোহর থেকে নড়াইলের কালিয়ার শুক্তগ্রামে যান।
Advertisement
সেখানে গফফার আলী নামে এক ব্যক্তির আশ্রয়ে ছিলেন। পরে ওই গ্রামের আলতাব মোল্লার মেয়ে রহিমা বেগমকে (রুপার মা) বিয়ে করেন। বিয়ের পর আলতাব মোল্লার বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করছিলেন। এলাকায় একটি সবজির দোকান দেন। ছয় শতাংশ জমিও কেনেন। নুর ইসলাম মোল্লা এবং রহিমা বেগমের সংসারে রুপা খাতুন এবং নুরজাহান নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। ভালই কাটছিল তাদের দিন। চৌদ্দ থেকে পনেরো বছর বসবাসের পর রুপার তখন চার বছর বয়স। একদিন সবজি বিক্রি করতে খুলনায় যান নুর ইসলাম মোল্লা। এরপর আর ফেরেননি। খুলনাসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও রুপার মা আর মামারা তার সন্ধান পাননি।
আরও পড়ুন
বিকেলে নিখোঁজ, ভোরে মিললো শিশুর বিবস্ত্র মরদেহঅভিমানে রহিমা বেগমও কখনও স্বামীকে খুঁজতে আসেননি চাটমোহরে। শুধু এটুকু শুনেছেন নুর ইসলাম মোল্লার বাড়ি চাটমোহরের দিয়ার বা দিয়ারা নামের কোনো গ্রামে। রহিমা বেগম তার মেয়ে রুপা ও নুরজাহানকে নিয়ে ভাইয়ের আশ্রয়ে থেকেছেন। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন।
রুপা বলেন, ‘তার বাবার বয়স এখন ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হবে। পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি লম্বা। মুখে হালকা চাপ দাড়ি ছিল। বাবার কোন ছবিও নেই তাদের কাছে। বাবা তার বাড়ি চাটমোহরে বলে জানিয়েছিলেন। এটা সত্য না মিথ্যা জানা নেই। তিনি বেঁচে আছেন না কি মরে গেছেন তাও জানি না। শুনেছি আমার দাদার নাম আব্দুল মোল্লা। বাবাকে খুঁজে না পেলে কষ্ট পাব। রুপা তার বাবাকে খুঁজে পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।’ এআইজে/এসআইটি/এমএস
Advertisement