দেশজুড়ে

ঝড়ে ভেঙেছে শ্রেণিকক্ষ, পাঠদান চলে ক্লাবের বারান্দায়

ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত হাটঘাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘরটি ঝড়ে ভেঙে পড়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। উপায়ান্তর না পেয়ে কখনো গাছতলায় আবার কখনো পাশের একটি ক্লাবের বারান্দায় চলছে পাঠদান কার্যক্রম। সবমিলিয়ে স্কুলটির ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের হাটঘাটা গ্রামে ২০০২ সালে অনগ্রসর এলাকার শিক্ষার আলো বিস্তারের লক্ষ্যে স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোস্তফা কামালের উদ্যোগে নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠা করেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘ প্রায় ২ যুগ ধরে ৪ চালা একটি টিনের ঘরে পাঠদান কার্যক্রম চলে আসছিল। এর মাঝে ঘরটির জীর্ণদশা দেখা দিলে ব্যক্তিগত অর্থায়নে সংস্কারও করা হয়। কিন্তু কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ঘরটি একেবারে পড়ে যায়। এখন ঘরের মধ্যে পাঠদানতো দূরের কথা প্রবেশ করার মতো অবস্থাও নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে স্কুলের ঘরটি একেবারে লন্ডভন্ড। বিদ্যালয়ের কাগজপত্র শিক্ষকের বাড়িতে রাখা হয়েছে। পাঠদান কার্যক্রম চলছে গাছতলায়, খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের বারান্দায় পাঠদান করা হয়। শিক্ষকদের বসারও কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের জায়গা সংকুলান হয় না। এছাড়া প্রায়ই ক্লাবের সদস্যদের চোখ রাঙানির শিকার হতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

স্কুলের ছাত্রী রহিমা খাতুন জানায়, আমাদের স্কুলঘর ভেঙে গেছে, গাছতলায় বসে পড়তে হয়, আবার পাশের একটি ক্লাবের বারান্দায় বসে পড়তে হয়। এখানে বাথরুম নেই, টিউবওয়েল নেই। খুবই সমস্যার মধ্যে দিয়ে আমাদের পড়তে হয়।

Advertisement

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৭ সালে নিয়াগপ্রাপ্ত হয়ে বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান পরিচালনা করে আসছি। ২০১৩ সালে জাতীয়করণে বাদ পড়ে বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৪ জন শিক্ষক এবং শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। পাঠ্যক্রম চলছে প্রাথমিকের সরকারি নিয়মানুসারে।

তিনি আরও বলেন, একটি ৪ চালা টিনের ঘর থাকলেও বর্তমানে তাতে ক্লাস নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কখনো খোলা আকাশের নিচে, কখনো গাছতলায় আবার কখনো পাশের একটি ক্লাবের বারান্দায় পাঠদান কার্যক্রম চলছে। আমাদের অবস্থা খুবই করুণ। সরকারের কাছে বিনীত প্রার্থনা দ্রুত ঘরটি মেরামত করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়টি নিবন্ধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা মো. মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, অনগ্রসর এলাকায় শিক্ষার আলো বিস্তারের লক্ষ্যে নিজস্ব জায়গায় নিজ উদ্যোগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। চেষ্টা করছি বিদ্যালয়টি নতুন করে সংস্কারের জন্য। সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে ভালো হতো। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্কুলটি টিকিয়ে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভাঙাচোরা স্কুলের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, যেখানে শিক্ষা আছে সেখানেই বই বিতরণের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। সে মোতাবেক চাহিদা মতো বিদ্যালয়টিতে বই দেওয়া হয়। যেহেতু বিদ্যালয়টি নিবন্ধনকৃত নয়, ফলে আর কিছুই করার নেই।

Advertisement

এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি মুহাম্মাদ মুরাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং শিক্ষা কমিটির সভাপতি সে হিসেবে বিদ্যালয়টির খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনিক বলেন, বিদ্যালয়টি নিবন্ধনকৃত নয়। তারপরও বিদ্যালয়ের ঘরটি সংস্কারের জন্য সরকারি পর্যায়ে কতটুকু সাহায্য সহযাগিতা করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করা হবে।

এফএ/এএসএম