জাতীয়

চাপাতি-ক্লোরোফর্ম সরবরাহকারী শাহীনের এপিএস পিন্টু নজরদারিতে

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার আগে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করা হয়। এরপর তাকে হত্যা করে চাপাতি দিয়ে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে গুম করে হত্যাকারীরা। কলকাতার নিউটাউনে সঞ্জিবা গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যায় ব্যবহৃত ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি সরবরাহ করেছিলেন পিন্টু নামে এক ভারতীয় নাগরিক। তাকে শনাক্ত করে নজরদারিতে রেখেছে কলকাতা সিআইডি। একই ঘটনায় ঢাকায় করা অপহরণ মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

Advertisement

কলকাতার সিআইডি পিন্টু সম্পর্কে ঢাকার ডিবিকে তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যের বরাতে ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমপি আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীনের ঘনিষ্ঠ সহচর এই পিন্টু।

শাহীন কলকাতা গেলে তার যাবতীয় কাজ দেখভাল করতেন পিন্টু। পিন্টুর নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। সেই গাড়ি ব্যবহার করতেন শাহীন। পিন্টু কলকাতাতেই রয়েছেন।

আনার হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

Advertisement

হারুন জানান, ঢাকার বসুন্ধরায় শাহীনের বাসায় থেকে ফয়সালকে হৃদরোগের রোগী ও মোস্তাফিজকে কিডনি রোগীর ভুয়া কাগজপত্র, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ভারতের ভিসা করা হয়। যতদিন পর্যন্ত তাদের ভিসা হয়নি ততদিন তারা শাহীনের ঢাকার বাসায় ছিলেন।

তিনি বলেন, ভিসা হওয়ার পর আক্তারুজ্জামান শাহীন রেলযোগে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ভারতে গিয়ে তারা ১০ এপ্রিল কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসে প্রবেশ করেন। ১৩ মে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বেরিয়ে লাল গাড়িতে করে এমপি আনারকে সঞ্জীবা গার্ডেনসে নিয়ে যান ফয়সাল। এরপর শাহীনের পিএস পিন্টুর কাছে থেকে অচেতন করার জন্য ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করেন মোস্তাফিজ, ফয়সাল ও জিহাদ।

ডিবিপ্রধান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আরও বলেছেন, হত্যাকাণ্ড শেষে যখন সবাই চলে যান তখন সর্বশেষ মোস্তাফিজ ও ফয়সাল সঞ্জীবা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। সেখানেও শাহীনের সঙ্গে কথা হয় তাদের। শাহীন তাদের নির্দেশ দেন, ফ্ল্যাটটিতে যেন কোনো চুল এবং রক্তের দাগ না থাকে, সবকিছু গুছিয়ে ঠিকঠাকভাবে রাখতে বলা হয় তাদের। এরপর ১৯ মে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বাংলাদেশে চলে আসেন। বাংলাদেশে আসার টিকিটও কেটে দেন শাহীন। দেশে এসেও শাহীনের ঢাকার বাসার তিনতলায় ওঠেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।

হারুন অর রশীদ বলেন, আনার হত্যাকাণ্ডের ঘাতক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া যখন ডিবির হাতে গ্রেফতার হন তখন শাহীনের দেওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন। এরপর তারা প্ল্যান করে দুর্গম পাহাড়ে কোনো মন্দিরে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেজে সেখানে লুকিয়ে থাকেন।

Advertisement

‘পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ের পাতাল কালীমন্দিরে ধুতি পরে মা কালীর পূজা শুরু করেন এবং নাম পরিবর্তন করে ফেলেন।’

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর গত ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে মেলেনি মরদেহ।

টিটি/এমএইচআর/এএসএম