জাতীয়

নেপালের বিদ্যুৎ আনতে চুক্তি সই জুলাইয়ের শেষে

ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে জুলাই মাসের শেষে চুক্তি সই হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জুলাই মাসের শেষে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে চুক্তি সই করে ফেলবো, এটি মোটামুটি ফাইনাল হয়ে গেছে। এখন ৪০ মেগাওয়াট এবং পরবর্তীসময়ে আরও বিদ্যুৎ আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, ভারত থেকে ভুটানে বিদ্যুতের যে লাইন যাবে, সেখান থেকে আমরা বিদ্যুৎ নেওয়ার চেষ্টা করছি। মোটামুটি একটা ভালো জায়গায় আসছে, ওখান থেকে ৩-৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা পাবো।

Advertisement

আরও পড়ুন২০৩৫ সালের মধ্যে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের আশা প্রধানমন্ত্রীরসমুদ্রশক্তি কাজে লাগিয়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে

সরকার নেপাল থেকে যে বিদ্যুৎ আমদানি করবে তার প্রতি কিলোওয়াটের দাম পড়বে ৮ টাকার ওপরে। এটি অনেক বেশি হয় কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, সুবিধা হলো ২০ বছর একই দরে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। জ্বালানি খরচও একই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি তেল বা গ্যাসের মতো না।

তিনি বলেন, গ্যাস যেটা ৭ ডলার ছিল সেটা আমরা ৬৭ ডলার দিয়ে কিনেছি। এই তো দুই বছর আগেই। সেখানে পেট্রোবাংলার প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত চলে গেছে। কিন্তু আমরা দাম সমন্বয় করিনি। আমাদের ডলারের একটা বড় অংশ গ্যাস কিনতে চলে গেছে।

সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে পাঁচ বছরের জন্য ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে গত ১১ জুন অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এখন আনুষ্ঠানিক চুক্তিসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। এই বিদ্যুতের প্রতি কিলোওয়াটের দাম পড়বে ৮ টাকা ১৭ পয়সা।

নেপালের বিদ্যুৎ আনতে প্রতিবছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকা লাগবে। এতে পাঁচ বছরে সরকারের ব্যয় হবে আনুমানিক ৬৫০ কোটি টাকা। ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে এ বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।

Advertisement

এর আগে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) আন্তর্জাতিক ক্রয় প্রস্তাব ইস্যু করলে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) প্রস্তাব দাখিল করে।

আরও পড়ুনআদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরুজ্বালানি খাত ‘সঠিক নীতিতে চলছে না’ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা

পিইসি প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশ করা দর প্রস্তাবে নেপাল থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করা হবে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের মোজাফফরবাদ সাব-স্টেশনে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৪০ ইউএস সেন্ট। এনভিভিএন ট্রেডিং মার্জিন হবে শূন্য দশমিক শূন্য ৫৯৫ ভারতীয় রুপি। এছাড়া ট্রান্সমিশন চার্জ হবে ভারতের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনের (সিইআরসি) নিয়ম অনুযায়ী।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। ভারত হয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে এ বিদ্যুৎ যোগ হবে।

নেপালের এ বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসে ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন ও আমদানি’ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই কমিটির প্রধান ছিলেন।

ওই বৈঠকে আ হ ম মুস্তফা কামাল নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ট্যারিফ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তখন জানান, নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম দেশে কয়লাভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের তুলনায় কম পড়বে।

এমএএস/এমকেআর/জেআইএম