সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট সাতজন গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জনই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া আরও যাদের নাম এসেছে তাদেরও গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। শিগগির তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এক ভিডিও বার্তায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বশেষ দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর আদালত তাদের ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল জানান, আক্তারুজ্জামান শাহীন তাদের ভারতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেন।
আরও পড়ুনমেডিকেল ভিসায় ভারতে যান মোস্তাফিজ-ফয়সাল, খরচ দেন শাহীনহিন্দু সেজে পাহাড়ের মন্দিরে ছিলেন ফয়সাল-মোস্তাফিজডিবিপ্রধান আরও বলেন, ঢাকার বসুন্ধরায় শাহীনের বাসায় থেকে ফয়সালকে হৃদরোগের রোগী ও মোস্তাফিজকে কিডনি রোগীর ভুয়া কাগজপত্র, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ভারতের ভিসা করা হয়। যতদিন পর্যন্ত তাদের ভিসা হয়নি ততদিন তারা শাহীনের ঢাকার বাসায় ছিলেন।
Advertisement
হারুন অর রশীদ বলেন, ভিসা হওয়ার পর আক্তারুজ্জামান শাহীন রেলযোগে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ভারতে গিয়ে তারা ১০ এপ্রিল কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসে প্রবেশ করেন। ১৩ মে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বেরিয়ে লাল গাড়িতে করে এমপি আনারকে সঞ্জীবা গার্ডেনসে নিয়ে যান ফয়সাল। এরপর শাহীনের পিএস পিন্টুর কাছে থেকে অচেতন করার জন্য ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করেন মোস্তাফিজ, ফয়সাল ও জিহাদ।
ডিবিপ্রধান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আরও বলেছেন, হত্যাকাণ্ড শেষে যখন সবাই চলে যান তখন সর্বশেষ মোস্তাফিজ ও ফয়সাল সঞ্জীবা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। সেখানেও শাহীনের সঙ্গে কথা হয় তাদের। শাহীন তাদের নির্দেশ দেন, ফ্ল্যাটটিতে যেন কোনো চুল এবং রক্তের দাগ না থাকে, সবকিছু গুছিয়ে ঠিকঠাকভাবে রাখতে বলা হয় তাদের। এরপর ১৯ মে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বাংলাদেশে চলে আসেন। বাংলাদেশে আসার টিকিটও কেটে দেন শাহীন। দেশে এসেও শাহীনের ঢাকার বাসার তিনতলায় ওঠেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।
তিনি বলেন, আনার হত্যাকাণ্ডের ঘাতক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া যখন ডিবির হাতে গ্রেফতার হন তখন শাহীনের দেওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন। এরপর তারা প্ল্যান করে দুর্গম পাহাড়ে কোনো মন্দিরে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেজে সেখানে লুকিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুনআনার হত্যায় সবাই গ্রেফতার, ‘মোটিভ’ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা‘পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ের পাতাল কালীমন্দিরে ধুতি পরে মা কালীর পূজা শুরু করেন এবং নাম পরিবর্তন করে ফেলেন।’
Advertisement
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর গত ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
এ ঘটনায় ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
টিটি/এমকেআর/জেআইএম