জাতীয়

মাসের মাঝামাঝি নিরবচ্ছিন্ন হবে গ্যাস, ৪ দিনে উন্নতি হবে বিদ্যুতের

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন এবং আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সচিবালয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।

সম্প্রতি গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের অভাবে শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমেছে। একই সঙ্গে দেশজুড়ে বিশেষ করে গ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আমরা আশাবাদী আগামী ১৫-১৬ তারিখের (জুলাই) দিকে গ্যাস নিরবচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ আগের থেকে ভালো হবে।'

Advertisement

আরও পড়ুন ঢাকায় তীব্র গ্যাস সংকট, রান্না-খাওয়ায় ভোগান্তি চরমে ২০৩৫ সালের মধ্যে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের আশা প্রধানমন্ত্রীর সমুদ্রশক্তি কাজে লাগিয়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে

তিনি বলেন, 'এরইমধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। আবার বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু হয়েছে। আদানি বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করেছে।'

ডলারের দামের তারতম্যের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে বড় একটা ফারাক রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন নসরুল হামিদ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার আমাদের জ্বালানি খাতে বরাদ্দ এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা। জ্বালানি বিভাগ সাধারণত তাদের নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে। গ্যাস কেনার ব্যাপারে, তেল কেনার ব্যাপারে আমরা আমাদের নিজেদের অর্থ ব্যবহার করি। উন্নয়ন কাজে আমাদের কিছু সহযোগিতা লাগে, যেটা আমরা সরকারের কাছ থেকে নিয়ে থাকি। আবার সময় মতো ফেরত দেওয়া হয়। সেটার পরিমাণ এ বছর এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা, খুব বেশি নয়।

এবার বিদ্যুৎ-জ্বালানি মিলিয়ে মোট বাজেট ৩৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান ফোকাস হলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা আগেও বলেছি আমাদের পারপাস হলো জ্বালানি সাশ্রয় এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কীভাবে দিতে পারি।

Advertisement

ঘূর্ণিঝড়ে ৩০ হাজার বিদ্যুতের পোল নষ্টপ্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ঝড়ের কারণে আমাদের একটি এফএসআরইউ (ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক মাস ধরে এটার কাজ চলছে। আগামী ১৪-১৫ তারিখের (জুলাই) দিকে এটি আসবে। ঝড়ের (ঘূর্ণিঝড় রিমাল) কারণে বিদ্যুতের ৩০ হাজার পোল নষ্ট হয়েছে। (এসব মেরামতে) টাকা সরকার থেকে খরচ হয়।

বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলে অনেক বিদ্যুতের সাব স্টেশন পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে যদি বড় বন্যা হয়, তাহলে আমাদের কী প্রস্তুতি থাকা দরকার।

গ্যাস-বিদ্যুৎতের দাম সরকার আইএমএফকে বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলেছে। বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি আমরা চলমান রেখেছি। সময় অনুযায়ী আমরা মূল্য সমন্বয় করেছি। এ পর্যন্ত দুইবার করেছি। বাকি সমন্বয় যেটা হবে সেটা সময়মতো হবে, যখন সরকার আমাদের বলবে সে অনুপাতে হবে।

তিনি বলেন, তেলের ক্ষেত্রে আমরা প্রতি মাসেই চেষ্টা করছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরা চাই যত কমে অ্যাডজাস্টমেন্ট করা যায়। এটা সরাসরি সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই।

‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাসটা নেয়, সেখানে একটা আলোচনা চলছে, আমরা দাম বাড়াবো। সেটা খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়বে না।’

মাতারবাড়ি থেকে পুরোদমে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ডিসেম্বরেবিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ বিদ্যুৎ এ বছর শেষের মধ্যেই চলে আসবে। অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সরকার বন্ধ রেখেছে। সরকার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ কিনতে যেসব চুক্তি হচ্ছে সেগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দিয়ে। নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট- এ হিসেবেই আমরা হাতে রাখছি।

নসরুল হামিদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ৭০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ এবং সোলার থেকে অন্তত ৬ হাজার মেগাওয়াট আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আনা যায় কি না।

২০২৭ সাল থেকে থাকবে না গ্যাসের সমস্যাপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আরও দুটি এফএসআরইউ করবো। আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছি, আগামী ২০২৭ সাল থেকে যাতে আর কোনো গ্যাসের সমস্যা না হয়। আমাদের ৪৬টি গ্যাস ফিল্ড, আরও ১০০টি কূপ খনন করা হবে। ১৪৬টি কূপ খননের কাজ চলমান।

এক বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীননসরুল হামিদ বলেন, একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট করার জন্য জ্বালানি বিভাগ থেকে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ছয়টি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। সবগুলোই ট্রান্সমিশন সম্পর্কিত। প্রকল্পগুলো এখনো কনফার্ম হয়নি। এগুলোর প্রাথমিক খরচ এক বিলিয়ন ডলারের বেশি।

গ্যাস অনুসন্ধানে লাগবে তিন বিলিয়ন ডলারগ্যাস অনুসন্ধানে খননে যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তাতে আড়াই থেকে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস পেলে দেখা যাবে ২০ গুণ টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। আমরা এখানে সরকারের কাছে কিছু টাকা বিনিয়োগ করার জন্য আবেদন করেছি। সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে।

আমরা এখন গভীরে খনন করছি। চার হাজার মিটার নিচে চলে যাচ্ছি। মাটির চার-পাঁচ কিলোমিটার নিচে চলে যাবো। সেখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

আরএমএম/এসআইটি/কেএসআর/জিকেএস