জাতীয়

আত্মসাৎ করা ৪৬ লাখ টাকা ফেরত দিলেন শ্রমিক ফেডারেশনের ওসমান আলী

ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আত্মসাৎ করা ৪৬ লাখ টাকা অবশেষে ফেরত দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। সোমবার (১ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান কার্যালয়ে এ অর্থ ফেরত দেন তিনি।

Advertisement

বুধবার (৩ জুলাই) শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে গত ২৪ জুন ‘কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ/শ্রমিক ফেডারেশনের ওসমান আলীর অপসারণ দাবি' শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র জানায়, জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ওসমান আলীর অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের নির্দেশ দেন সংগঠনটির সভাপতি সংসদ সদস্য শাজাহান খান। তার নির্দেশনা অনুযায়ী গত সোমবার (১ জুলাই) মতিঝিলে শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন সংগঠনটির নেতারা।

Advertisement

শ্রমিক ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাদিকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে ওসমান আলীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ওসমান আলী ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৭৭৬) ও ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-বি-৪৯৪) কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণ হয়। ওসমান আলী সংগঠনের টাকা নিজ ব্যাংক হিসাবে রেখেছেন বলে স্বীকারোক্তি দেন। পরে নিজ ব্যাংক হিসাব নম্বর থেকে ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৪ টাকার (আংশিক হিসাব) একটি চেক সাদিকুর রহমান হিরুর মাধ্যমে ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৭৭৬) নেতা নূরুল আমিন নূরু ও শহিদুল্লাহ চৌধুরী শাহিনের কাছে হস্তান্তর করেন।

এছাড়া ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-বি-৪৯৪) আরও প্রায় এক কোটি ৪৫ লাখ টাকার হিসাব বাকি আছে। এখন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে হিসাব-নিকাশ চলছে।

আরও পড়ুন

কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ/ শ্রমিক ফেডারেশনের ওসমান আলীর অপসারণ দাবি

এ বিষয়ে জানতে বুধবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে ওসমান আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ওসমান আলীর চেক জমা দেওয়া এবং তার চেকের একটি ছবি জাগো নিউজের কাছে আছে।

Advertisement

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাদিকুর রহমান হিরু জাগো নিউজকে বলেন, গত সোমবার ওসমান আলীর আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত দেওয়া নিয়েই বৈঠক করা হয়েছিল। তিনি নিজের ব্যাংক হিসাবে টাকা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু সংগঠনের টাকা ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে রাখার নিয়ম নেই।

তিনি বলেন, বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ওসমান আলী ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে ওসমান আলী ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকার হিসাব দিয়েছেন। তখন তার কাছ থেকে এই টাকার চেক নেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা আরও হিসাব করে দেখা হবে।

এর আগে গত ২৩ জুন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংগঠনের সভাপতি শাজাহান খান বরাবর আবেদন করেন শ্রমিক নেতারা। এ অভিযোগে ওসমান আলীকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

ওই আবেদনে স্বাক্ষর করেছিলেন ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মিরপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এছাড়া ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতিও আবেদনে স্বাক্ষর করেন।

আবেদনে বলা হয়, শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব হলো শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা ও ট্রেড ইউনিয়নের বিধিমালা শ্রমিক সংগঠনকে অবহিত করা। কিন্তু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। সেই বিভেদকে পুঁজি করে ঢাকা মহানগরীর শ্রমিক ইউনিয়নের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।

এমএমএ/এমএইচআর/এমএস