ধর্ম

ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা মানে রক্ত ও বৈবাহিক সূত্রে যাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে, সম্পর্ক অনুযায়ী তাদের খোঁজ-খবর রাখা, তাদের সাথে সদাচরণ করা, বিপদ আপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো, সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করা। ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের নিন্দা করা হয়েছে।

Advertisement

মুমিন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে

মুমিনের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। আল্লাহ জ্ঞানী মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,

وَ الَّذِیۡنَ یَصِلُوۡنَ مَاۤ اَمَرَ اللّٰهُ بِهٖۤ اَنۡ یُّوۡصَلَ وَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ وَ یَخَافُوۡنَ سُوۡٓءَ الۡحِسَابِ

আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে। (সুরা রা’দ: ২১)

Advertisement

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা পাপাচারীদের কাজ

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, আত্মীয়তার হক আদায় না করা কাফের ও পাপাচারীদের বৈশিষ্ট্য। কোরআনে আল্লাহ তাআলা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের সাবধান করে বলেছেন,

الَّذِیۡنَ یَنۡقُضُوۡنَ عَهۡدَ اللّٰهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مِیۡثَاقِهٖ وَ یَقۡطَعُوۡنَ مَاۤ اَمَرَ اللّٰهُ بِهٖۤ اَنۡ یُّوۡصَلَ وَ یُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ

যারা আল্লাহর সঙ্গে সুদৃঢ় অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক আল্লাহ অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সুরা বাকারা: ২৭)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী অভিশপ্ত

যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তাদের লানত করেন। আল্লাহ বলেন,

Advertisement

فَهَلۡ عَسَیۡتُمۡ اِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ اَنۡ تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ تُقَطِّعُوۡۤا اَرۡحَامَكُمۡ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ لَعَنَهُمُ اللّٰهُ فَاَصَمَّهُمۡ وَ اَعۡمٰۤی اَبۡصَارَهُمۡ

ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, আর করেন বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন। (সুরা মুহাম্মাদ: ২২, ২৩)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ الَّذِیۡنَ یَنۡقُضُوۡنَ عَهۡدَ اللّٰهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مِیۡثَاقِهٖ وَ یَقۡطَعُوۡنَ مَاۤ اَمَرَ اللّٰهُ بِهٖۤ اَنۡ یُّوۡصَلَ وَ یُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ ۙ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ اللَّعۡنَۃُ وَ لَهُمۡ سُوۡٓءُ الدَّارِ

আর যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের জন্যই লানত আর তাদের জন্যই রয়েছ আখিরাতের মন্দ আবাস। (সুরা রা’দ: ২৫)

সামর্থ্য অনুযায়ী অভাবগ্রস্ত আত্মীয়দের সাহায্য করুন

আল্লাহ যদি কাউকে ক্ষমতা, সম্পদ ও সমৃদ্ধি দান করেন, তার দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। আত্মীয়দের মধ্যে কেউ অভাবগ্রস্ত থাকলে, ঋণগ্রস্ত হলে তার কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় তাদের পাশে দাঁড়ানো, সাহায্য করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّ اللّٰهَ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَقۡدِرُ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ فَاٰتِ ذَاالۡقُرۡبٰی حَقَّهٗ وَ الۡمِسۡكِیۡنَ وَ ابۡنَ‌السَّبِیۡلِ ذٰلِكَ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡهَ اللّٰهِ ۫ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

তারা কি লক্ষ্য করেনা যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন অথবা তা সীমিত করেন? এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম। (সুরা রুম: ৩৭)

আত্মীয়স্বজন যদি জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তাহলে তাদেরকে জাকাত দেওয়া যাবে। আত্মীয়দের মধ্যে অভাবী কেউ থাকলে তাকেই জাকাত দেওয়া উত্তম। তাতে একইসাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও জাকাত আদায় উভয় আমলের সওয়াবই পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন,

الصدقة في المسكين صدقة وفي ذي الرحم صدقة وصلة

সাধারণ অভাবীদের সদকা করলে তা শুধু সদকা হয়, আর আত্মীয়দের দিলে তা সদকা হয়, আত্মীয়তার হক আদায়ও হয়। (মুসনাদে আহমাদ: ১৫৭৯৪, সুনানে নাসাঈ: ২৫৮২)

প্রতিদান ও শাস্তি শুরু হয় দুনিয়াতেই

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতিদান পাওয়া শুরু হয় দুনিয়াতেই। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে দুনিয়াতে সমৃদ্ধি ও বরকত আসে। আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে দেন। হায়াত বাড়িয়ে দেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

مَن أحَبَّ أنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ ويُنْسأَ لَهُ فِي أثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ

যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিজিকে সমৃদ্ধি আসুক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে। (সহিহ বুখারি: সহিহ বুখারি: ২০৬৭, ৫৯৮৬, সহিহ মুসলিম: ৬৬৮৭-৬৬৮৮)

একইভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তিও দুনিয়া থেকেই শুরু হয়। আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجِّلَ اللَّهُ لِصَاحِبِهِ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْبَغْىِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ

বিদ্রোহ ও রক্তসম্পৰ্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তাআলা যার শাস্তি পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন। (সুনানে তিরমিজি: ২৫১১)

ওএফএফ/জিকেএস