দেশজুড়ে

‘আগে ভাত খাওয়ার সময় পেতাম না, এখন ভাতের টাকাও ওঠে না’

জুন থেকে অক্টোবর, বর্ষার ভরা মৌসুমে বরিশালের স্থানীয় নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও মিলছে না ইলিশ। জেলেরা নিয়মিত নদীতে গেলেও ফিরছেন খালি হাতে। এতে বরিশালের পাইকারি ইলিশের আড়তগুলোতেও নেই সেই চিরচেনা হাঁকডাক।

Advertisement

তবে ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না থাকায় বৈরী আবহাওয়াকে দায়ী করছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এমন বিরূপ আবহাওয়া এর আগে কখনো ছিল না। এই আবহাওয়ার কারণে নদ-নদীতে ইলিশ কিছুটা কম ধরা পড়ছে। বিরূপ এ আবহাওয়া ঠিক হলেই কিছুদিনের মধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়বে ইলিশ।

বুধবার (৩ জুলাই) সকালে বরিশাল নগরীর পোর্টরোড ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি আড়তগুলো ইলিশশূন্য। যে ইলিশ উঠছে, তার দাম অত্যধিক। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই হাজার টাকায়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুলাই থেকে ইলিশ ধরার মৌসুম শুরু হয়েছে। বর্ষার চিরচেনা এই পরিবেশ নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ার উপযোগী সময়। সে অনুযায়ী এখন আড়তগুলো ইলিশে ভরপুর থাকার কথা। অথচ আড়তে কর্মরত শ্রমিকদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।

Advertisement

পোর্ট রোডের শ্রমিক সফিক বলেন, বিগত দিনে এমন সময় ইলিশে আড়ত সয়লাব থাকতো। কাজের চাপে আমরা ভাত খাওয়ার সময় পর্যন্ত পেতাম না। অথচ এখন মাছ না থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে। যে মাছ আসছে তা দিয়ে ভাত খাওয়ার খরচও ওঠে না।

শ্রমিক ইকবাল বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুমেও আড়তে কোনো মাছ নেই, তাই বসে বসে লুডু ও ক্যারম খেলে সময় কাটাতে হচ্ছে।

বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের টুমচরের জেলে নেতা আবদুল সালাম বলেন, আষাঢ় মাসে ইলিশের এত আকাল আগে দেখিনি। তার দাবি, নদীতে এখন প্রচুর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই জাল ফেললে চাহিদা অনুযায়ী মাছ পড়ছে না।

পোর্ট রোডের আড়তদার মেসার্স দুলাল ফিশের ম্যানেজার মো. রবিন জাগো নিউজকে বলেন, সাগরে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই সময়ে বরিশালের স্থানীয় নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তো। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ। চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ ধরা না পড়ায় আড়তদার, পাইকার ও শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন।

Advertisement

আড়তদার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সারা বছর দেখে আসছি আষাঢ় মাস এলেই ইলিশে সয়লাব হয়ে যেত পোর্টরোডের মোকাম। অথচ ইলিশের ভরা মৌসুমের এক সপ্তাহ পার হলেও আশানুরূপ মাছ পাচ্ছি না।

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস জাগো নিউজকে বলেন, ইলিশ সংকটের এ চিত্র এখন দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীতে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ না থাকায় ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। তাই স্থানীয় নদ-নদীই এখন ইলিশ পাওয়ার একমাত্র ভরসা। কিন্তু নদীতেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। তবে টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশ কিছুটা কম ধরা পড়ছে।

তবে ভরা মৌসুমেও ইলিশ ধরা না পড়ায় বৈরী আবহাওয়াকে দায়ী করছেন মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক নৃপেন্দ নাথ বিশ্বাস।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বৈষ্ণিক উষ্ণতা ও সময়মতো নদীতে পানি না থাকা, আবার হঠাৎ বৃদ্ধির কারণে এমনটা হচ্ছে। তবে আমাদের নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ রয়েছে। বিরূপ এ আবহাওয়া ঠিক হলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। তখন ইলিশের দামও কিছুটা সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে।

এফএ/জেআইএম