সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কে গ্যাস সংযোগের লাইন নির্মাণের জন্য চীন থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে বেশ আগেই। এসব সরঞ্জাম দিয়ে গত ডিসেম্বর থেকে নির্মাণকাজও শুরু করেছে ডন কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরইমধ্যে ৭০ ভাগ কাজও সম্পন্ন করেছে তারা। অথচ কাজের শেষ সময়ে এসে সরঞ্জাম কেনার ‘ফ্লোর ইন্সপেকশনে’ চীন যাচ্ছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) ৯ জন কর্মকর্তা।
Advertisement
চীন থেকে সরঞ্জাম আমদানির দীর্ঘ কয়েক মাস পর সরকারি খরচে এ বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত কোনো প্রকল্পের সরঞ্জাম কেনার আগে দেখতে যাওয়াকে ‘ফ্লোর ইন্সপেকশন’ বলা হয়।
আরও পড়ুন-
সপ্তম মেয়াদেও হলো না শেষ, কাজ বাকি রেখেই সমাপ্ত ঘোষণারোববার (৩০ জুন) বিকেলে পিজিসিএল সূত্র জানায়, গত ১৫ মে সরকারি আদেশে (জিও) এই বিদেশ সফরের অনুমোদন দেওয়া হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব (বাজেট অধিশাখা) খাদিজা তাহেরা ববি এতে স্বাক্ষর করেছেন। গত ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত অথবা তার কাছাকাছি কোনো সময়ে ভ্রমণকালসহ মোট ১২ দিন তারা এই পরিদর্শনে সময় কাটাতে পারবেন।
Advertisement
তবে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা সফরে না গেলেও জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক দফায় বাড়িয়ে মোট ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর তীরে ‘সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক’ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে গ্যাস-সংযোগের জন্য পাইপলাইন নির্মাণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ঢাকার ডন কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত ডিসেম্বর থেকে চার কিলোমিটার পাইপ লাইনের নির্মাণকাজ শুরু করেছে। তারা দরপত্র অনুযায়ী ১৬ ইঞ্চি ডায়া, চার কিলোমিটার ৩৫০ পিএসআইজি গ্যাস পাইপ লাইন ফিটিংস এবং কোটিং উপকরণসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম চীন থেকেই আমদানি করেছেন।
আরও পড়ুন-
চার বছরের প্রকল্প ১৩ বছরেও হলো না শেষসরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সায়দাবাদ এলাকায় চার লেনের রাস্তা ও রেললাইনের নিচ দিয়ে গ্যাস সঞ্চালনের লাইন স্থাপনের কাজ করছেন শ্রমিকরা। জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, এই লাইনের মাধ্যমেই বিসিক শিল্পপার্কে গ্যাস যাবে।
Advertisement
এদিকে এ কাজের সরঞ্জাম কেনার ‘ফ্লোর ইন্সপেকশনে’ চীনে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিস্টেম অ্যানালিস্ট কবির উদ্দিন, পিজিসিএলের মহা-ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম, শৈলজা নন্দা বসাক ও শাহিনুর আলম, উপ-মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম ও এইচ এম জুলফিকার, ব্যবস্থাপক আক্তারুজ্জামান খান ও অলি উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক সৈকত মাহমুদ এবং সহকারী প্রকৌশলী কিশলয় মিত্রা।
সরকারি আদেশে এ সফরের শর্তে বলা হয়েছে, ভ্রমণকালে এই কর্মকর্তারা দায়িত্বরত বলে গণ্য হবেন। প্রাপ্য ভাতা তাদের স্থানীয় মুদ্রায় নিতে হবে। একইসঙ্গে এর কোনো অংশই বৈদেশিক মুদ্রায় উত্তোলন করা যাবে না। অনুমোদিত মেয়াদের বাইরে তারা বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন না। এই ভ্রমণের সব খরচ আয়োজক সংস্থাকে (পিজিসিএল) বহন করতে হবে। সফর থেকে ফেরার সাত দিনের মধ্যে পরিদর্শনের ব্যাপারে তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হবে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের বিষয়ে ২০২২ সালের ১২ মে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষাসফর, এপিএ, ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।’
আরও পড়ুন-
উত্তরবঙ্গের শিল্প জোন হবে সিরাজগঞ্জ, গড়ে উঠবে ৮২৯টি কারখানাঢাকার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ডন কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজার মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কের পরিকল্পনা ও দরপত্র মোতাবেক আমরা চীন থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করে এরইমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। বাকি কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
পিজিসিএলের মহা-ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী এসএম মুহিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ কাজের সরঞ্জাম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীন থেকে আমদানি করেই শিল্পপার্কের গ্যাস সঞ্চালন লাইনের কাজ করছে। এ প্রকল্পের ভেতর পরিদর্শন ব্যয় (বিদেশ ভ্রমণ) ধরা আছে। নিয়ম অনুযায়ী অবশ্য সরঞ্জাম কেনার আগেই পরিদর্শনে যেতে হয়।
তবে কাজের শেষ সময়ে চীনে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রকল্প পরিচালক ও পিজিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদেবার্তা দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
তবে চীনে ১০ কর্মকর্তার সরঞ্জাম দেখতে যাওয়ার বিষয়ে পিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রুখসানা নাজমা ইছহাক মুঠোফোনে এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন না জানিয়ে সাক্ষাতে কথা বলতে বলেন।
এফএ/এএসএম