দেশজুড়ে

মিরসরাইয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষ

টানা পাঁচদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

Advertisement

পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে সহস্রাধিক পরিবার। কাজ না থাকায় কষ্টে রয়েছেন দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে খাল সংস্কার না থাকায় ও অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নিমজ্জিত রয়েছে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, মিরসরাই সদর, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের বিভিন্ন স্থানে। এতে অনেকটা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জনবহুল বড়দারোগাহাট-বগাচতর সড়ক ও জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়ক। পানিবন্দি হয়ে আছে ফেনাফুনী, ওসমানপুরের মরগাং, চিনকীআস্তানা ও খিলমুরালী গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার।

Advertisement

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাফুনী গ্রামে পানিবন্দি রয়েছে অনেক পরিবার। কোমর পরিমাণ পানি হওয়ায় মানুষের চলাচলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের জানান, ফেনাফুনী খালটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টি হলেতো ভোগান্তির শেষ থাকে না। কোমর পরিমাণ পানির কারণে চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেকের চুলায় পানি ওঠায় রান্নাবান্নাও হয়নি।

আরেক বাসিন্দা শিহাব শিবুল জানান, পাহাড়ি তিন ছড়ার পানি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হয়ে এক ছড়া দিয়ে যায়। কিন্তু ছড়ার মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ করে দখলের কারণে পানি যাওয়ার পথ বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি বছর বৃষ্টি হলে আমাদের গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত থাকে। অচিরেই খালের ওপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খাল সংস্কার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপাহাড় এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পানিতে ডুবে আছে ঘরের মেঝে। অর্ধেক ডুবে আছে টিউবয়েল। গত কয়েকদিন ঘরে পানি ঢুকে তাদের চুলা জ্বলছে না।

Advertisement

উপজেলার টেকের হাট এলাকার মাছচাষি মোহাম্মদ নুরুল আবছার জানান, টানা বৃষ্টিতে ইছাখালী ও ওসমানপুর এলাকার অনেক মৎস্য প্রকল্পের মাছ ভেসে গেছে। আমারও দুটি প্রকল্প থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাল পার্শ্ববর্তী হাট-বাজারগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকান-পাট ও স্থাপনা। এগুলোর কারণে বিভিন্ন খালে পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে প্রতি বছর নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের পথ না রেখে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, আমার ইউনিয়নের ফেনাফুনী ও সৈদালী গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার বিকেলে আমি এলাকগুলো পরিদর্শন করেছি। মূলত মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের লোকজন খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে আমার ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমি এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যারের সঙ্গে আলোচনা করবো।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ও সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, মুহুরীপ্রজেক্ট এলাকায় মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় দুইদিন বৃষ্টি হলেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা পাঁচদিন বৃষ্টি হওয়ায় মৎস্যচাষীদের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চাষি আমাকে ক্ষতির বিষয়ে অবহিত করেনি।

এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/এএসএম