বহুল আলোচিত রামপালে নির্মাণাধীন ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ঢাকায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে রাজধানীর আমিনবাজার মাওয়া মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। আর এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা । যা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ (মঙ্গলবার) একনেক সভায় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প মোট ব্যয়ের ৫৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে বহন করা হবে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে ১৫৫ কোটি টাকা। আর বিদেশি সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে অবশিষ্ট ৬৬৩ কোটি টাকা। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক বিষয়টি অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেধে দেয়ার কথা ছিল। তবে নানা জঠিলতার কারণে প্রকল্পটি অনুমোদনে বাড়তি সময় ব্যয় হয়েছে। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের জুন মাসে।বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে ওয়েস্টার্ন গ্রীড নেটওয়ার্ক ঈশ্বরদী-ঘোড়াশাল ২৩০ কেভি প্রথম আন্তঃসংযোগ ও আশুগঞ্জ সিরাজগঞ্জ দ্বিতীয় আন্তঃসংযোগ লাইনের মাধ্যমে ইস্টার্ন গ্রীড নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার কোনো আন্তঃসংযোগ নেই। এ অবস্থায় মংলা থেকে ঢাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সঞ্চালন লাইন প্রয়োজন। এ লাইনটি ভবিষ্যতে মাওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য ব্যবহার করা হবে। এটি হবে তৃতীয় পূর্ব-পশ্চিম আন্তঃসংযোগ।প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মংলায় ১ হাজার ৩২০ মেগা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। এটি মংলা সমুদ্র বন্দরের কাছে। ২৩০/১৩২ কেভি লাইনের ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান প্রকল্পের। এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা ও বরিশালে বিতরণ করা হবে। সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবহার সম্ভব নয়। অবশিষ্ট বিদ্যুৎ ঢাকায় পাঠাতে আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রয়োজন।জানা যায়, ১ হাজার ৪৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে গত বছরের জুলাই মাস থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে প্রস্তাব দেয়া হয়। ২৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা ডাকে পরিকল্পনা কমিশন। পিইসি সভায় প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়।সভায় জানানো হয়, আমিনবাজারে প্রাথমিকভাবে তিন মিটার গভীর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত জমির গভীরতা প্রায় ১০ মিটার। জমির গভীরতা বেশি থাকায় ঢাল রক্ষায় বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় ভূমি উন্নয়ন ব্যয় ১২ কোটি ২৩ লাখ টাকা থেকে বড়িয়ে ৫৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ধরা হয়।অন্য কয়েকটি খাতে পরিবর্তন করে চূড়ান্ত ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এছাড়া অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় বাস্তবায়নকাল বাড়ানো হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।প্রকল্পটির বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আহমদ হোসেন খান বলেন, আমিনবাজার মাওয়া মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন শীর্ষক প্রকল্পটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বিধায় পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদনের সুপারিশ করেছে। এতে মোট ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় হবে।সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পিজিসিবি চেয়েছিল যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ন্যায় পদ্মা নদীতে নির্মিত ব্রিজের উপর দিয়ে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হোক। তবে সেতু কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে সেতুর উপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে না। তবে পদ্মা সেতু থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পানির নীচ দিয়ে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে।আরএস/পিআর
Advertisement