দেশজুড়ে

চাকরি না করে আমবাগান গড়ে তাক লাগালেন জামালপুরের যুবক

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন। উচ্চশিক্ষা শেষে ছোটেননি চাকরির পেছনে। নিজেই গড়ে তুলেছেন ১২ একর জমিতে বিশাল এক আমবাগান। শুধু যে নিজেই স্বাবলম্বী হয়েছেন তা কিন্তু নয়, বেকার যুবকদের নিজ বাগানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

Advertisement

বলা হচ্ছিল মাহমুদুল হাসান রুমান নামে ৩০ বছর বয়সী এক তরুণ উদ্যোক্তার কথা। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে অনাবাদী জমিতে আমবাগান করেছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার পাররামরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোয়ামারী গ্রামের হাছিনুল বাহারের ছেলে রুমান। এই আমের বাগান নিয়েই তার পথচলা শুরু হয়। যা রীতিমতো অবাক করেছে এলাকাবাসীকে।

এদিকে আমের জাত ও ফলন পরীক্ষার জন্য নিজস্ব পরীক্ষাগার গড়ে তুলেছেন তিনি। এখানে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০০ আমের জাত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছেন পাকিস্তানের চোষা, থাইল্যান্ডের মহাচানক, জাপানের মিয়াজাকি, স্পেনের অস্টিন, ফ্লোরিডার কেইট ও ভারতের সীতাভোগ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

আম রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছে সরকার: কৃষিমন্ত্রী সেই আমবাগান এখন ইকোপার্ক ৭ বছরে রাজশাহী অঞ্চলে দ্বিগুণ আমবাগান

এছাড়া দেশীয় জাতের ল্যাঙড়া, ক্ষীরশাপাত, হাঁড়িভাঙ্গা, গৌড়মতি, আশ্বিনা, গোপালভোগসহ ৬০টি জাতের আম রয়েছে এই বাগানে। তার এই উদ্ভাবন ছড়িয়ে দিতে চান সারাদেশে।

মাহমুদুল হাসান রুমান জাগো নিউজকে বলেন, আমি এমন একজন উদ্যোক্তা হতে চাই, দেশে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই যা নিজের এলাকার কৃষকের পাশাপাশি দেশের কৃষকদের লাভবান করবে। এজন্য দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন জাতের চারা এনে সেগুলো পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে এমন একটি জাত খুঁজছি যেটি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবেন, দেশের মানুষ উপকৃত হবে। আমাকে দেখে জেলার কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হবেন।

তিনি আরও জানান, আগামীতে নার্সারির মাধ্যমে সৌখিন জাতের চারা, যারা সৌখিন অর্থাৎ যারা ছাদবাগান করতে পছন্দ করেন কিংবা বাড়ির আনাচেকানাচে গাছ লাগাতে পছন্দ করেন তাদের দেওয়া হবে। এছাড়া যেগুলো কমার্শিয়াল সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে সারাদেশে ছড়িয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।

Advertisement

এই বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ৩০-৪০ জন কর্মচারী। এদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক বলেন, আগে কাজ করার জন্য গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হতো। এখন আর যাওয়া লাগে না। এই বাগানে কাজ করে ভালোভাবে সংসার চলে।

জাহিদুল ইসলাম নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আগে কাজ করার জন্য ঢাকা যেতাম। এখন এই বাগানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আল্লাহর রহমতে অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকায় পরিবার নিয়ে ভালোভাবেই কাটছে।

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার পিকন কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, এবছর জেলায় এক হাজার ৯শ ৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। রুমানের মতো উদ্যোক্তারা যদি আম চাষে এগিয়ে আসেন, তবে তাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া হটিক্যাল সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উন্নত জাতের চারা বিতরণ করা হবে। তারা যেন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন সেজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

মো. নাসিম উদ্দিন/জেডএইচ/জেআইএম