জাতীয়

আইজিপি পদে ফের মামুন নাকি নতুন মুখ?

বাংলাদেশ পুলিশের ৩১তম পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। দেড় বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে এ পদে আসীন। সেই নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১১ জুলাই। আড়াই লাখের বেশি পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে বর্তমান আইজিপি মামুনই থাকছেন নাকি নতুন কেউ আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

Advertisement

পরবর্তী পুলিশপ্রধান হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, বর্তমান আইজিপি ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই পদে আবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন। কারণ হিসেবে সূত্রটি বলছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতিকাণ্ডের তথ্য সামনে আসার পর পুলিশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বর্তমান আইজিপি মামুনের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ বাড়তে পারে। এটি হলে মামুনই হবেন এই পদে দেশের সবচেয়ে বেশি সময় থাকা আইজিপি। এর আগে পরপর দুই মেয়াদে আইজিপি থাকলেও তিন মেয়াদে কেউ দায়িত্ব পালন করেননি।

আর যদি মেয়াদ না বাড়ানো হয়, তাহলে বিসিএস ১২তম ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন, গ্রেড-১) মো. কামরুল আহসানকে নতুন আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

পুলিশ সূত্র জানায়, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ বাড়লে এটি হবে দ্বিতীয় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। এর আগে গত বছরের ৯ জানুয়ারি তার চাকরির মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

পাশাপাশি একই ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর মল্লিক ফকরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. আতিকুল ইসলামের নামও আলোচনায় আছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আইজিপি পদে সুনির্দিষ্ট কোনো মেয়াদকাল নেই। সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী, ৫৯ বছর বয়স হলে অবসরে যান কর্মকর্তারা। ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী, ৫৯ বছর বয়স পূর্ণ হয় বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের। পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয় বিবেচনায় রেখে তাকে দেড় বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১২ জুলাই থেকে নতুন আইজিপির দায়িত্ব পালন শুরুর কথা। তবে বর্তমান আইজিপিকে আবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, পুলিশে এমন আলোচনাই বেশি।

পাশাপাশি এটাও আলোচনা আছে- আইজিপি পদে নতুন কেউ আসতে পারেন। সরকারের হাইকমান্ড আইজিপি পদ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। এরই মধ্যে বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসানের ফাইল প্রস্তুত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফাইলগুলো বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে বলে জানা যায়।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনচৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা থানাধীন শ্রীহাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

Advertisement

আরও পড়ুনপুলিশ সদস্যদের জীবনাচারে শুদ্ধাচার চর্চার আহ্বান আইজিপিরপুলিশে যুক্ত হচ্ছে রোবট-ড্রোন-আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকাগজে-কলমে অধিদপ্তর নয়, হেডকোয়ার্টার চায় পুলিশ

তিনি অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ঢাকা রেঞ্জে ও ডিআইজি হিসেবে ডিআইজি (অপারেশন্স), ডিআইজি (প্রশাসন), রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ও ঢাকা রেঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনি অতিরিক্ত আইজিপির (এইচআরএম) দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। র‌্যাব ফোর্সেসের মহাপরিচালকও ছিলেন। র‌্যাবের আগে তিনি সিআইডি প্রধান হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশে বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সৎ কর্মকর্তা হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে।

কামরুল আহসানআইপিজি হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে ১২তম ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন, গ্রেড-১) মো. কামরুল আহসানের। তিনি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইমামপুর গ্রামে ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে (এমবিএ) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯১ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগ দেন। মৌলিক ও বাস্তব প্রশিক্ষণ শেষে খাগড়াছড়ি জেলার সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়িত হওয়ার পর চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী সার্কেল এএসপি, এএসপি ডিএসবি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি, ফেনী জেলার অ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপার, পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন) ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ট্রেনিং) এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য পুলিশ কর্মকর্তা মো. কামরুল আহসান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের ‘পুলিশ অ্যাডভাইজার’ হিসেবে সিয়েরালিওন ও সুদানে দায়িত্ব পালন করেন।

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে গড়ে তোলা পুলিশের বিশেষায়িত শাখা অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কামরুল।

সুদান মিশনের কনটিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের গৌরবের পাশাপাশি মিশনগুলোতে দৃষ্টান্তমূলক চাকরির স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক’ লাভ করেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. কামরুল আহসান।

রেক্টর মল্লিক ফকরুল ইসলামআইজিপি পদের জন্য আলোচনায় আছেন অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর মল্লিক ফকরুল ইসলাম। ১৯৬৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলায় তার জন্ম। ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি ১২তম বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন মল্লিক ফকরুল ইসলাম।

২০০৩ সালে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ফেনী জেলার পুলিশ সুপার এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি কমান্ডার হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুনাম অর্জন করেন। এরপর অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১২ সালে দায়িত্ব পালন করেন র‌্যাবে। পরে ২০১৪ সালে ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিটি এসবি ও ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত ছিলেন।

আতিকুল ইসলামআতিকুল ইসলাম বিসিএস ১২তম ব্যাচে থেকে ১৯৯১ সালে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জোনে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৬৬ সালে রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার জুম্মাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আতিকুল ইসলাম। তিনি বিএসএমএমইউ থেকে ফার্মাকোলজি বিষয়ে স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশ পুলিশে অসাধারণ ও দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ছয়বার আইজি ব্যাজ, দুবার বিপিএম সার্ভিস, দুবার পিপিএম (সেবা) (গ্যালান্ট্রি) অর্জন করেন। তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির খবরে দেশ-বিদেশে আলোচনার ঝড় বইছে। এ নিয়ে পুলিশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় সরকারের হাইকমান্ডও চিন্তিত। বর্তমান আইজিপির মেয়াদ শেষ হবে ১১ জুলাই। এরই মধ্যে সরকারের নীতিনির্ধারকরা আইজিপি পদে কাকে আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা করছেন। নতুন আইজিপি নিয়োগ দেওয়া হবে, নাকি বর্তমান আইজিপির মেয়াদ আবারও বাড়ানো হবে- তা নিয়েও আলোচনা চলছে। পুলিশের বর্তমান পরিস্থিতি কে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন নীতিনির্ধারকরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরকারের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ চাইছে বর্তমান আইজিপিকে আবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে। তার মেয়াদ হবে ছয় মাস অথবা এক বছর। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আরেকটি অংশ চাইছে এ পদে নতুন কেউ আসুক। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসানকেই এগিয়ে রাখা হয়েছে।

বর্তমান আইজিপির মেয়াদ না বাড়লে কামরুল আহসানই পরবর্তী আইজিপি হচ্ছেন সে আভাস অনেকটাই স্পষ্ট। কারণ ১২তম ব্যাচের তিনি গ্রেড-১ পদমর্যাদার। পাশাপাশি একই ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর মল্লিক ফকরুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) আতিকুল ইসলামের নামও আইজিপি হওয়ার বিষয়ে আলোচনায় আছে।

টিটি/এএসএ/জেআইএম