দেশজুড়ে

বরগুনায় বনের মধ্যে আটকে গেলো বিশাল তিমির মরদেহ

বরগুনার পায়রা নদীর তীরে বনের মধ্যে আটকে আছে একটি ২২ হাত লম্বা ও ১৫ ফুট প্রস্থের তিমির মরদেহ। সোমবার (১ জুলাই) তিমিটি স্থানীয়রা দেখলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে দেন। খবর পেয়ে বনবিভাগ, পরিবেশকর্মী ও স্থানীয়রা সেখানে ছুটে যান এবং দেখতে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, দুপুরে সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছোনবুনিয়ার চর এলাকায় অর্ধগলিত মাথাবিহীন তিমিটি আটকে যায়।

তারা জানান, রাতে জোয়ারের পানিতে মৃত তিমি মাছের দেহটি ভেসে এসে আটকে যেতে পারে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন বিভাগ, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।

স্থানীয় ইউনুস মৃধা বলেন, মাছটির যে অংশটুকু ভেসে এসেছে এটা অনেক বড়। এত বড় তিমি আমরা কখনো দেখিনি। এটার শরীরের বিভিন্ন স্থান পঁচে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

Advertisement

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী আরিফ রহমান বলেন, বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া সাধারণত কখনো উপকূলে আসে না তিমি। এটি ২২ হাত লম্বা আর ১৫ ফুট প্রস্থ। ধারণা করা হচ্ছে এটি গভীর সমুদ্রের তিমি। মৃত তিমিটি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে করে আশপাশের এলাকা দূষিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাছটির হাড় সংরক্ষণ করে গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পারে। মঙ্গলবার পটুয়াখালী থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসবে, তারপর বলা যাবে এর সার্বিক অবস্থা কী।

সমুদ্রের নীল অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জাগো নিউজকে বলেন, এটি মূলত কুঁজো তিমি (মেগাপ্টেরার নোভায়েংলিয়া)। বালীন তিমির একটি প্রজাতি। বৃহত্তর রোরকুয়েল তিমির প্রজাতি, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈর্ঘ্য ৩৯–৫২ ফুট এবং ওজন প্রায় ২৫-৩০ মেট্রিক টন হয়ে থাকে। কুঁজো তিমির দেহের একটি স্বতন্ত্র আকার রয়েছে, দুটি লম্বা বুক পাখনা এবং একটি নিচু করা মাথা। এদের চেনা যায় এদের আচরণ দিয়ে যখন এরা পানির উপরিভাগে নিঃশ্বাস নিতে আসে। এরা তিমি পর্যবেক্ষকদের মাঝে জনপ্রিয়। পুরুষরা ১০ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী একটি জটিল গান উৎপন্ন করতে পারে, যা তারা একসঙ্গে কয়েক ঘণ্টা ধরে গাইতে পারে। একটি গ্রুপের সমস্ত পুরুষ একই গান তৈরি করে, যা প্রতিটি মৌসুমে আলাদা। এর উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার নয়, যদিও এটি উত্তেজনাকে প্ররোচিত করে সঙ্গমের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

এই গবেষক মৃত্যুর কারণ হিসেবে জানান, এরা বছরে ১৬০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, প্রবল জোয়ারে এসে ভাটায় অনেক সময় আটকে যায়। এ কারণে গতিপথ আটকে মারা যেতে পারে। এর যে দৈর্ঘ্য দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি পুরুষ প্রজাতির তিমি।

বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বিস্তারিত তথ্যের জন্য ঘটনাস্থলে বাবুগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, পায়রা নদীর ছোনবুনিয়ার চরে অর্ধগলিত একটি তিমি মাছের মরদেহ পাওয়া গেছে। কী কারণে তিমিটি মারা গেছে সঠিকভাবে তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মৃত তিমিটি পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে তাই গর্ত করে এটিকে দ্রুত মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

এফএ/জেআইএম