কক্সবাজারে পাহাড়ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন। শহরের কলাতলী, ঘোনাপাড়া, পাহাড়তলী, বাদশা ঘোনা, আদর্শগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করতে দেখা গেছে। এসময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সিপিপি, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের তৎপরতা চলছে।
Advertisement
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, লঘুচাপের কারণে দেশে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। কক্সবাজারেও রয়েছে এর প্রভাব। শনিবার ১২০, রোববার ৮১ এবং সোমবার ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে কক্সবাজারে। আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় পাহাড়ধসসহ নানা দুর্যোগ ঘটতে পারে। জেলায় দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
সূত্রমতে, কক্সবাজারে ঝুঁকিতে বাস করছে প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ। এভাবে বাস করতে গিয়ে পাহাড়ধসে মাটিচাপায় গত ১০ বছরে নারী-শিশুসহ অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব এলাকায় বসবাসরতদের সরাতে শুষ্ক মৌসুমে কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও বর্ষায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেই দৌড়ঝাঁপ বাড়ে প্রশাসনের। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ভারী বর্ষণ শুরুর পর ঝুঁকিতে বাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ ঝুঁকি ছেড়ে নিরাপদে যাবার খবর পাওয়া যায়নি।
ভারী বর্ষণে কক্সবাজারে পাহাড়ধসের শঙ্কা
Advertisement
সর্বশেষ ২১ জুন (শুক্রবার) ভোররাতে পাহাড়ধসে কক্সবাজার শহরের বাদশাহঘোনায় স্বামী-স্ত্রীর করুণ মৃত্যু হয়। পাহাড় কাটা বন্ধ করা না গেলে ঝুঁকিতে বাসকারীর সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি পাহাড়ধসে মৃত্যুর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন
ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা কক্সবাজারে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, পাহাড়ধসের শঙ্কাজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র মতে, ২০১৫ সাল হতে চলতি বছর পর্যন্ত সময়ে পাহাড়ধসে কক্সবাজারে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৫ সালে পাঁচজন, ২০১৬ সালে পাঁচজন, ২০১৭ সালে চারজন, ২০১৮ সালে পাঁচজন, ২০১৯ সালে চারজন, ২০২১ সালে ১২ জন, ২০২২ সালে পাঁচজন। চলতি মাসের ১৯ জুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং ২১ জুন কক্সবাজার শহরের বাদশাহ ঘোনায় পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। তবে ২০২০ ও ২৩ সালে পাহাড়ধসে কতজন মারা গেছেন এমন তথ্য জেলা প্রশাসনে সংরক্ষিত নেই। আর চলতি বছরের এ সময় পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু রেকর্ড করেছে তারা।
কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্র মতে, চলতি সময় পর্যন্ত জেলায় ৪৭ হাজার ৯১৪ দখলদারের হাতে ধ্বংস হয়েছে ২৫ হাজার ৭ দশমিক ৬৯ একর বনভূমি।
Advertisement
সংশ্লিষ্টদের মতে, চকরিয়া, রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফ, পেকুয়া এবং মহেশখালীতেও পাহাড় কেটে ঝুঁকিতে বসবাস বাড়ছে। একইভাবে বাস বাড়ছে নাইক্যংছড়ির দোছড়ি, বাইশারীসহ আশপাশের এলাকায়। তবে কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বাস রয়েছে পৌরসভার পাঁচটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
ঝুঁকিতে থাকাদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করছেন জেলা প্রশাসন
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা সভাপতি সাংবাদিক এইচ এম এরশাদ বলেন, প্রতি বছর জেলায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড় শুধু বর্ষা এলেই শুরু হয়। তাও কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। শুষ্ক মৌসুমে আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আনম হেলাল উদ্দিন বলেন, জেলার পাহাড় ও ইসিএ সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন হলে প্রতি বছর প্রাণহানি এড়ানো যেত। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে বলে মনে হয় না।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসতকরাদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রসেস। এরপরও ঝুঁকি এড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সভায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রধান করে উপকমিটিও গঠন করা হয়।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, নিজেরা সচেতন না হলে ঝুঁকি এড়ানো কঠিন। প্রতিবেশ রক্ষায় পাহাড় কাটা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস বন্ধ করতে জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাহাড়ধস রোধে বেশি করে গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/আরএইচ/এএসএম