জীবন পাল
Advertisement
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট রোডের পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভ্যানগাড়িতে ফল বিক্রি করেন মো. রিপন মিয়া। মা মারা যাওয়ার কিছুদিন পরই তার বাবা আরেকটি বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করেন। এরপর থেকেই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়তে হয় রিপনকে।
পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকায় নিজ খরচে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নিতে শুরু করেন ফল বিক্রি। ক্লাস সিক্স থেকে এসএসসি পর্যন্ত ফল বিক্রি করে নিজের পড়ালেখা চালিয়েছেন রিপন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডিও তিনি পেড়িয়েছেন নিজের ফল বিক্রির টাকা দিয়েই। ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করার ইচ্ছে তার।
৬ বছর বয়স থেকেই ব্যবসায় নামেন রিপন। ফাঁকে ফাঁকে বাড়তি আয়ের আশায় টাইলসের কাজও করেন। তবে ফল বিক্রির ব্যবসা তাকে বেশি আকৃষ্ট করে। ২ বছর বয়স থেকেই রিপন বাবা-মা হারা। বড় হয়েছেন দাদা বাড়িতে। দাদা-দাদির মৃত্যুর পর চাচার সংসারে বড় হয়েছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন
সুখ-দুঃখের নীরব সাক্ষী বাংলা বাজার ব্রিজ সাপের চেয়ে বিষাক্ত প্রাণী আছে আপনার আশপাশেই৩ ভাই ও এক বোনের মধ্যে রিপন দ্বিতীয়। বড় ভাই সবজি দোকানে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। আর ছোট বোন পড়াশোনা করছেন একটি মাদ্রাসায়। রিপন বলেন, ‘ছোটবেলায় অতিরিক্ত দুষ্টুমি করায় আমাকে দাদাবাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই মা মারা যান। তারপর বাবা নতুন বিয়ে করেন।’
শহরের সিন্দুরখান রোডে ২ রুমের বাসা নিয়ে একাই থাকেন তিনি। ফলবিক্রি করেই নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলের ব্যবসা করে নিজ খরচে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রিপনকে প্রতিমাসে ঘর ভাড়া হিসেবে গুনতে হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
বিদ্যুৎ বিলসহ যা দাঁড়ায় ৪ হাজার টাকায়। ফল বিক্রি করে দৈনিক ২-৮ হাজার টাকা আয় হয়। তার খাওয়া ও নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ বাবদ প্রতিদিন খরচ হয় ৪০০ টাকা।
Advertisement
মৌসুমভেদে দেশি-বিদেশি ফল ভ্যানগাড়িতে সাজিয়ে রাস্তায় বসেন রিপন। কমলা, মালটা, আপেল, আঙুর ও কলা হলো রিপনের দোকানের নিয়মিত বিক্রির ফলের তালিকা। এর বাইরে লিচু, আম, কাঁঠাল মৌসুমে এসব ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকে।
সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তার ফল বিক্রি চলে। রাতে দোকানপাট বন্ধ করে বাসায় ফেরা মানুষ ফল কিনতে ঢুঁ মারেন তার দোকানে। কালীঘাট রোড, সিন্দুরখান রোড, জালালিয়া রোড, মুসলিম বাগ, রামনগরসহ আশপাশের মানুষের কাছে রিপন খুবই পরিচিত।
আশপাশের সবাই রিপনকে খুব ভালবাসেন। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ দেখে সবাই গর্ব করেন। আশপাশের ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, রিপন খুব ভালো ছেলে। তার কয়েকটি গুণের মধ্যে একটি হলো, পারিবারিক এতো সমস্যার সম্মুখীণ হয়েও তিনি লেখাপড়া বাদ দেননি।
নিজের চেষ্টায় পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবাই তাকে এ বিষয়ে খুব উৎসাহ দেন। যেহেতু নিজ চেষ্টায় এতটা পথ পাড়ি দিয়েছেন রিপন, বাকিটা পথও যেন তিনি ভালোভাবে পাড়ি দিতে পারেন এমনই প্রত্যাশা সবার।
জেএমএস/এমএস