ব্রিটেনের রাজপরিবারের রানি হতে চাননি তিনি, চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের হৃদয়ের রানি হতে। সেটাই হয়েছে।আজও প্রিয়মুখ হয়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে রেখেছেন প্রিন্সেস ডায়ানা। এখনো এই নামটি শুনলে হাস্যোজ্জ্বল এক প্রিয়দর্শিনীর মুখ ভেসে ওঠে।
Advertisement
১৯৬১ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ডায়ানা। বেঁচে থাকলে এখন তার বয়স হতো ৬৩ বছর। হয়তো ঘটা করে পরিবার নিয়ে জন্মদিনও পালন করতেন। কিন্তু সবকিছুই এখন শুধুই স্মৃতি। মৃত্যুর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও ডায়ানাকে নিয়ে এখনো মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।
প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্সেস ডায়ানা দম্পতির প্রথম সন্তান প্রিন্স উইলিয়ামের জন্ম ১৯৮২ সালে। পরে ১৯৮৪ সালে জন্ম হয় প্রিন্স হ্যারির। ১৯৯৭ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ডায়ানা নিহত হন। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন মিসরের ধনকুবের দোদি আল ফায়েদ। তিনিও প্রাণ হারান।
তবে প্রিন্স চার্লস এবং ডায়ানার দাম্পত্য জীবন খুব একটা সুখকর ছিল না। কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পেলেও চার্লসের ভালোবাসা পাননি ডায়ানা।
Advertisement
ডায়নার সঙ্গে বিয়ের আগে ক্যামিলার সঙ্গে বছর দুয়েক সম্পর্ক ছিল চার্লসের। তারপরেও ডায়ানাকে বিয়ে করেন চার্লস। ক্যামিলাও বিয়ে করেন তার প্রাক্তন প্রেমিককে। বিয়ের আগে ক্যামিলার সঙ্গে সদ্ভাব ছিল ডায়ানার। যদিও বিয়ের পর দূরত্ব বাড়ে দু’জনের। ডায়ানা-চার্লস উপস্থিত থাকতে পারেন এমন অনুষ্ঠানগুলো এড়িয়েই চলতেন ক্যামিলা। অন্যদিকে স্বামীর আচার-আচারণে সন্দেহ বাড়তে থাকে ডায়ানার। সেই সময় বেশ কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
১৯৯৪ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে চার্লস প্রথম ক্যামিলার সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন। এরপরেই ক্যামিলার সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে যান তার স্বামী অ্যান্ড্রু পার্কার।
এক বছর পরে একটি বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দেন ডায়ানাও। তিনি জানান, জেমস হিউইটের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা। ডায়ানাকে ঘোড়া চালানো শেখাতেন তিনি। সেখানে চার্লসের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিতও দেন ডায়ানা।
১৯৯৬ সালে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয় ডায়ানা ও চার্লসের। পরের বছর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ডায়ানার। প্রাক্তন স্ত্রীর মৃত্যুর পর অবশ্য প্রাক্তন প্রেমিকা ক্যামিলার কাছেই ফিরে যান প্রিন্স চার্লস। প্রায় নয়বছর পর ক্যামিলা পার্কারকে বিয়ে করেন প্রিন্স অব ওয়েলস।
Advertisement
ডায়না সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ লেখক অ্যান্ড্রু মর্টন। ডায়ানাকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন তিনি। ‘ডায়ানা, হার ট্রু স্টোরি’ নামের ওই বইতে অ্যান্ড্রু জানিয়েছেন, বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই ডায়ানা ও প্রিন্স চার্লসের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়েছিল।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে হাত কেটে আত্মহত্যা করতে যান ডায়ানা। মর্টন আরও জানান, প্রায়ই রাত জেগে থাকতেন ডায়ানা। বিয়ের পরেই চার্লসের সঙ্গে একটি প্রমোদতরীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন ডায়ানা। সেখানে প্রচুর পরিমাণ মদ্যপান করেন তিনি। বেশির ভাগ সময়ই নেশায় বেহুঁশ হয়ে ঘুমিয়ে থাকতেন।
বিয়ের দিন সকালে নাস্তা গ্রহণের সময় প্রিন্স চার্লসের পাশে বসেছিলেন মর্টন। অন্যপাশে বসেছিলেন ডায়ানা। খাবার চলাকালীন সময়ে চার্লসের সঙ্গে একবারও কথা বললেনি ডায়ানা। বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক লেগেছিল মর্টনের কাছে। এ বিষয়ে চার্লসকে প্রশ্ন করলে তিনিও নাকি জবাব না দিয়ে অন্যপ্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন: প্রিন্স হ্যারির জন্মে খুশি ছিলেন না রাজা তৃতীয় চার্লস বিয়ের পরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ডায়নাপ্রিন্সেস ডায়ানার একটি বিখ্যাত উক্তি- আমি যাকে ভালোবাসি, সে ছাড়া পুরো বিশ্ব আমাকে ভালোবসেছিল। সত্যিই পুরো বিশ্ব এখনো ডায়ানাকে ভালোবাসে। তার ফ্যাশন সেন্স ছিল অনবদ্য। আর তার মানবকল্যাণমূলক কাজের জন্য এখনো তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
টিটিএন