অর্থনীতি

জ্বালানি খাত ‘সঠিক নীতিতে চলছে না’ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ যে নীতিতে দেশের জ্বালানি খাত চলছে, তা সঠিক নয় বলে মনে করেন দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। রোববার (৩০ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

Advertisement

এ খাতে দুর্নীতি বন্ধ ও মেগাপ্রকল্পগুলো নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও সংলাপে জানায় কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানিকে আমি অনেকটা মানবদেহে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব না।

তিনি বলেন, ‘সরকারের কিছু পদক্ষেপ জনমানুষের কল্যাণে হচ্ছে না বলে আমাদের ধারণা। সরকার কি কারণে বিইআরসিকে অকার্যকর করলেন, আমার বোধগম্য হয় না। আমরা আশা করি সরকার এই পথ থেকে সরে আসবেন। জ্বালানি মিক্সের সঙ্গে পরিবেশের যোগাযোগ রয়েছে। পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।’

Advertisement

১০ বছর ধরে গ্যাস অনুসন্ধান না করে আমদানির পথে হেঁটে বাংলাদেশকে এখন জ্বালানি খাতে খেসারত দিতে হচ্ছে বলে সংলাপে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘সরকারকে বারবার বলা হয়েছে দেশের ভূ-গভীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস আছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কর্ণপাত না করে এলপিজি আমদানির পথে হেঁটেছে। এতে করে জ্বালানি খাতে এক দশক পিছিয়ে গেছে দেশ।’

বাংলাদেশকে গ্যাসের প্রাইম এরিয়া উল্লেখ করে বদরুল ইমাম বলেন, চাইলে বাংলাদেশ নাইজেরিয়া বা আমেরিকার মতো গ্যাস খাতে সমৃদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু ‘সদিচ্ছা ও দূরদর্শিতার অভাবে’ বাংলাদেশের অগ্রগতি এ খাতে ঝিমিয়ে পড়েছে।

ভারতের উদহারণ টেনে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভারতের রাজস্থানে শেভরন কোম্পানি মোট ১৩টি কূপ খনন করে কোনো গ্যাস পায়নি। সবাই তখন বলেছিল, এখানে আর কূপ খনন করে লাভ নেই। অথচ জরিপের ওপর ভরসা রেখে ১৪ নম্বর কূপ খনন করে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিল, সেখানে সেই রাজস্থানেই ভারতের বৃহৎ গ্যাস ফিল্ডের একটি আবিষ্কৃত হয়।’

তিনি বলেন, ‘গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দুই-একটি কূপ খনন করে গ্যাস নেই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না।’ তার দাবি, যথেষ্ট পরিমাণে কূপ খনন করা গেলে বাংলাদেশের অনশোর এবং অফশোর-দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

Advertisement

সরকারের আইনগত দুর্বলতার প্রসঙ্গ টেনে বদরুল ইমাম বলেন, সবসময় আমদানির চিন্তা করলে হবে না। নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে শক্ত নীতির প্রয়োজন। দৃঢ়তা নিয়ে কাজ করলে দেশের মাটিতেই পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া সম্ভব।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত কাদায় পড়ে গেছে, প্রথম জিনিসটা হবে বের হয়ে আসা। সাংঘাতিক রকমের সমস্যা হচ্ছে। ভুলগুলোর কারণে আজকের এই সংকট, সেগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান বড় রকমের অবহেলা করা হয়েছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে। ১০০ কূপ খনন করতে চায়, কিন্তু বাজেটে বরাদ্দ কোথায়, সরকারের নিজম্ব অর্থায়নে কাজগুলো যেখানে করা দরকার তা করা হচ্ছে না। কে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজের গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ করার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘বিএনপির সময় অভিযোগ তুলতাম খাম্বা আছে বিদ্যুৎ নেই। এখন বিদ্যুতের কারখানা আছে, সঞ্চালন লাইন নেই, বিদ্যুৎ নেই সমন্বয়হীনতা রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই সামিট গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে গেছে, যাচ্ছে। এর ফলে ক্রমাগত দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেখানে কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। সরকার ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সেই সন্দেহেকে আরও জোরালো করে।

তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। আমি মনে করি যদি সদিচ্ছা থাকে, অবিলম্বে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করবেন।

ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতিময় বড়ুয়া বলেন, ‘যদি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয়, তাহলে বিইআরসি রাখার দরকার কী! বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারার সংশোধনী মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানে বলা হয়েছে কোনো আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হলে তা শুরু থেকেই বাতিলযোগ্য। তাই আইনটি অবিলম্বে বাতিল চেয়েছি আমরা। জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইনের মাধ্যমে জ্বালানি খাতকে পঙ্গু করতে ভূমিকা রাখছে।’

অবিলম্বে আইনটি বাতিল করা উচিৎ বলে জানান তিনি।

ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার ঘাটতিতে জীবন বিপন্ন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র! এই ঘাটতি সৃষ্টি করা।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এমএস