সমাজের কলহ নিরসনে জনপ্রতিনিধিদের সমাধানের বিধান থাকলেও ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটছে। অসহায় ও দিনমুজুর একটি পরিবারের সমস্যাকে কেন্দ্র করে নিজেদের বানানো নীতিতে তাদের সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়।
Advertisement
মসজিদে নামাজ পড়া, শিশুদের সকালে মক্তবে আরবি পড়তে যাওয়া নিষেধসহ কেউ তাদের সঙ্গে কথা বললে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করার নিয়ম করা হয়েছে। গত ২২ দিন ধরে অসহায় এ পরিবারটি অমানবিক জীবন যাপন করছে।
পরিবারটির একমাত্র কর্তা অটোরিকশাচালক মইজ উদ্দিন বলেন, আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে কয়েকজন মানুষ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই অমানবিক কাজটি করছে। আমাদের সঙ্গে কেউ কোনো কথা বলে না, আমার বাচ্চাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ করেছে, আমার গাড়িতে কেউ উঠে না, এই সমাজের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বললে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করার নিয়ম করেছে। জরিমানার ভয়ে কেউ আমাদের সাথে কথা বলে না। আমার সন্তানদের মক্তবে পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ এই সমাজের কারো সাথে কথা বললে আমাদেরও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
মইজ উদ্দিন বলেন, আমার অভাব অটনের সংসার। প্রায় সময়ই আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়ে থাকে। পারিবারিক সমস্যা প্রায় প্রতিটি ঘরে। এর চেয়ে জঘন্য নানান ঘটনা সমাজে ঘটে। তাই বলে কাউকে এক ঘরে করে রাখার আইন আছে শুনিনি। আমরা গরিব ও অসহায় বলে এই জুলুম চালানো হচ্ছে।
Advertisement
সমাজের কারা আপনার ওপর এই জুলুমের নিয়ম করছে জানতে চাইলে মইজ উদ্দিন বলেন, আমি খেঁটে খাওয়া মানুষ। একটি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। তবে এই সমাজ যারা চালায়, যারা বিত্তশালী ক্ষমতাবান তারা সবাই। না হয় আমাদের অপরাধ থাকলে তারা বিচার করবে কিন্তু এক ঘরে করার এই জুলুম তারা করতে পারতো না। কোরবানির ঈদে আগে তারা আমাদের এক ঘরে করে দেয়। ঈদের সময় সমাজের কেউ আমাদের কোনো মাংশ তারা দেয়নি। এমনকি গরিব বলে সমাজ থেকে যে একটা ভাগ পাই তা থেকেও তারা আমাদের বঞ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, কলিজা ফেঁটে যায় এই ঈদে আমি আমার সন্তানদের এক টুকরা মাংশ কিনে খাওয়াতে পারিনি। আমার বাবা-মা ঢাকায় থাকে। শুনেছি তাদের ডেকে এনে স্বাক্ষর করে রেখেছে। সমাজের সবাই নাকি আমাদের এক ঘরে করার বিষয়ে সই দিয়েছে। মিজানুর রহমান মিজান নামের একজন লোকের প্ররোচনায় আমার পরিবারকে তারা এক ঘরে রেখেছে। আমাকে তারা বলেছে সমাজের সবার সই আছে। আমি এই বিষয়ে কোনো কথা বললে তারা নাকি আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে। এই ভয়ে এতদিন আমি কাউকে কিছু বলিনি। আমি এই জুলুমের বিচার চাই। আমি এই অত্যাচারের শাস্তি চাই। কিন্তু কে করবে তাদের বিচার? কে দেবে তাদের শাস্তি? তারাইতো এই সমাজের জমিদার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর বোরহান উদ্দিন মুঠোফোনে জাগো নিউজকে জানান, মইজ উদ্দিন ও তার স্ত্রী আসমার মধ্যে বহুবার জগড়া বিবাদ হয়েছে। এসব বিষয় প্রতিবেশীরা জানতেন। সর্বশেষ গত ৯ জুন তাদের এসব বিষয়ে সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে আমি তাদের সংশোধন হওয়ার জন্য বলে এসেছি। এরপর কে বা কারা তাদের এই সমাজচ্যুত করে। তাদের নাম বলতে পারব না। তবে এ ধরনের বিষয় খুবই দুঃখজনক। যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। আর ওই দরিদ্র পরিবারকে স্বাভাবিকভাবে চলার ব্যবস্থা করা হবে।
সুজন চাঁদপুর জেলা সভাপতি অধ্যাপক মোশারেফ হোসেন বলেন, বিষয়টি শুধু মৌলিক অধিকার নয়, সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই ধরনের আইন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নেই।
Advertisement
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বলেন, এটা অমানবিক ঘটনা। তারা অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা জানান, কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে একঘরে করে রাখা আইন বহির্ভূত কাজ। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেবেন।
শরীফুল ইসলাম/এমআরএম