কয়েকদিন আগেও তীব্র গরমে পুড়ছিল বাংলাদেশ, ভারতসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়া। কোথাও কোথাও তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। বর্ষার আগমনে গরমের উত্তাপ কিছুটা কমেছে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার কারণে বহুল প্রত্যাশিত সেই বৃষ্টিই এখন অভিশাপ হয়ে উঠেছে কিছু জায়গায়। গত কয়েক সপ্তাহে ভারী বর্ষণ, বন্যা ও ভূমিধসে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।
Advertisement
গত ১৯ জুন ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারে পৃথক পাহাড়ধসে নয়জন নিহত হন। আহত হন আরও ১০-১৫ জন। সেদিন ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এসব পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে স্থানীয় কিশোরসহ দুজন ছিলেন বাংলাদেশি, বাকিরা রোহিঙ্গা।
একইভাবে, গত ২১ ও ২৯ জুন কক্সবাজারে পৃথক পাহাড়ধসে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
বর্ষা মৌসুম এবং মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বাংলাদেশে বৃষ্টি বেড়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় দেশের আট বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
ভারতবাংলাদেশের মতো ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও চলছে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। গত শুক্রবার (২৮ জুন) সেখানে রেকর্ড ২২৮ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা ১৯৩৬ সালের পর থেকে একদিনে সর্বোচ্চ। এদিন বৃষ্টিজনিত একাধিক দুর্ঘটনায় ১১ জন প্রাণ হারান।
এ অবস্থায় ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, দিল্লিতে আরও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে ভারতের রাজধানীতে কমলা রঙের সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
পাকিস্তানগত পাঁচদিনে পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে ভারী বৃষ্টিতে অন্তত ছয়জন মারা গেছেন। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন।
Advertisement
আরও পড়ুন>>
ভারতে ৫১ বছরের রেকর্ড ভাঙলো দাবদাহ, তাপমাত্রা ছাড়ালো ৪৭ ডিগ্রি ভারতে একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে ভারী বৃষ্টি-তুষারপাত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ‘আর্দ্র এপ্রিল’ দেখলো পাকিস্তানপ্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্যোগের কারণে এন-৭০ মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, পূর্ব বেলুচিস্তানের কোহ-ই-সুলেমান পর্বতমালায় ভূমিধসের কারণে ধনা সর এলাকায় প্রচুর যানবাহন আটকা পড়েছে।
নেপালনেপালে গত তিন সপ্তাহে ভারী বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিধস ও বজ্রপাতে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত বুধবারই (২৬ জুন) মারা গেছেন ১৪ জন।
দেশটির ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথোরিটি (এনডিআরএমএ) জানিয়েছে, বুধবার ভূমিধসে আটজন, বজ্রপাতে পাঁচজন এবং বন্যায় অন্তত একজন মারা গেছেন। ভূমিধসের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। এছাড়াও ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে শঙ্কাচলতি বছর বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ জায়গায় অতিবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট আউটলুক ফোরাম (এসএসিওএফ)।
গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, ২০২৪ সালের দক্ষিণপশ্চিম বর্ষা মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। তবে উত্তর, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি, জিও নিউজ, টাইমস অব ইন্ডিয়াকেএএ/