দেশজুড়ে

বাবার ভ্যান হারিয়ে হাসপাতালে কাঁদছে শিশু শাকিল

শরীয়তপুরে অচেতন করে শাকিল (১২) নামের এক স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভ্যানগাড়ি নিয়ে গেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। ভ্যানগাড়িটি তার বাবার। ছুটির দিনে বাড়তি উপার্জনের জন্য মাদারীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে শরীয়তপুরে এসেছিল শাকিল।

Advertisement

শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে সদর উপজেলার কানার বাজার এলাকা থেকে শাকিলকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয়রা।

শাকিল মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের টেকেরহাট এলাকার বসারচর এলাকার এমদাদ সরদার ও তানজিলা বেগম দম্পত্তির ছেলে। সে টেকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, টেকেরহাট এলাকার বসারচর এলাকার এমদাদ সরদারের অভাব অনটনের সংসারে ভ্যানগাড়িটি বড় আয়ের উৎস। মাঝেমধ্যে এমদাদ সরদার অসুস্থ থাকলে তার ছোট ছেলে স্কুলপড়ুয়া শাকিল যাত্রী পরিবহন করে থাকে। শুক্রবার এমদাদ সরদার তার বড় ছেলে সাকিবকে নিয়ে কৃষি জমিতে পাট কাটছিলেন আর ভ্যানটি বাড়িতেই রাখা ছিল।

Advertisement

শাকিলের স্কুল বন্ধ থাকায় উপার্জনের আশায় সকালে ভ্যান গাড়িটি নিয়ে বের হয় সে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে প্রায় ৫০০ টাকা আয়ও করে। এরপর সে যাত্রী নিয়ে খোঁয়াজপুর টেকেরহাট থেকে শরীয়তপুর জেলার মনোহর মোড় এলাকায় আসে। সেখান থেকে দুইজন ব্যক্তি আংগারিয়া ইউনিয়নের দাঁদপুর যাওয়ার জন্য ৩০০ টাকা ভাড়ায় চুক্তি করে। তবে সেই যাত্রীরা তাকে দাঁদপুর না নিয়ে শরীয়তপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে অন্য যাত্রী উঠবে বলে সেখানে নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ে তারা তাকে সিঙ্গাড়া খাওয়ায় এবং কানার বাজার এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর শাকিল অচেতন হয়ে পড়লে রাস্তায় ফেলে ভ্যানগাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। স্থানীয়রা শাকিলকে অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে সে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

জ্ঞান ফিরলে শাকিল বার বার তার বাবার ভ্যানটির কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। শাকিল বলে, আমাদের অভাবের সংসার। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বাবা অসুস্থ থাকলে তার ভ্যানটি চালিয়ে কিছু রোজগার করি। আজ বাবা ভ্যানটি বাড়ি রেখে পাট কাটতে গেলে আমি সেটি নিয়ে বের হই। দুপুরের দিকে দুই জন যাত্রী আমাকে ৩০০ টাকায় রিজার্ভ করে দাঁদপুর নেওয়ার কথা বলে প্রথমে বাস স্ট্যান্ড গিয়ে সিঙ্গাড়া খাওয়ায়। তারপর আমার কিছু মনে নেই। তারা আমার ভ্যানগাড়িটি নিয়ে চলে গেছে। এখন আমি কীভাবে বাড়ি ফিরবো। এই ভ্যানটি না পেলে বাবা আমাকে মেরেই ফেলবে। কেউ আমার ভ্যানগাড়িটি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা হবে। পাশাপাশি ভ্যানটি উদ্ধার করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হবে।

Advertisement

বিধান মজুমদার অনি/এফএ/এএসএম