মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খালের পাড়ে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের পশ্চিম কোণে চার শতক জায়গার ওপর স্টিলের কাঠামো দিয়ে দোতলা একটি ভবন তৈরি করেছিলেন আব্দুল আলিম তালুকদার। এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় পৃথক ৭টি কক্ষ ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি। প্রতিটি কক্ষে একটি করে পরিবার বাস করতো। আর নিচতলার একাংশ সাদিক এ্যাগ্রোর ছাগলের খামার ও তাদের অফিসের জন্য ভাড়া দেন। উচ্ছেদ অভিযানে ভাঙা হয়েছে সেটি।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় যখন সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে, তখনো ওই পরিবারগুলো তাদের উচ্ছেদের খবর জানতো না। বেলা পৌনে ১২টায় যখন সাদিক অ্যাগ্রোর অফিস অংশে অভিযান চালানো হয়, তখন নিজেদের আসবাবপত্র রক্ষায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করের তারা। তাদের অভিযোগ, বসত ঘরের মালামাল বের করতে সময় দেয়নি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের এমন অভিযান দেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা। কেউ কেউ নিজেদের মালামাল বের করছেন। অনেকে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন। তবে ঘরেরে অধিকাংশ মালামালই তারা বের করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। এসব পরিবারের কর্তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকায় এই উচ্ছেদের খবর তারা পাননি। অনেকে তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। নিজের চোখের সামনে ঘরের মালামাল ভাঙতে দেখে হতবাক তারা।
আরও পড়ুন একাধিক নোটিশ দিলেও অবৈধ স্থাপনা সরায়নি সাদিক অ্যাগ্রো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম উচ্ছেদ অভিযানে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মে ভ্রাম্যমাণ আদালতছয় মাস আগে সাদিক অ্যাগ্রোর ছাগলের ফার্ম যে ভবনে সেটির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া নেন ইকবাল হোসেন ও সালমা আক্তার দম্পতি। উচ্ছেদে অভিযানের সময় ইকবাল হোসেন মোহাম্মদপুরে নিজ কর্মস্থলে ছিলেন। খবর পেয়ে এসে দেখেন তার তিন বছর ও নয় বছরের দুই শিশু রাস্তায় বসে কান্না করছে। স্ত্রী ঘর থেকে মালামাল নামাতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
Advertisement
আলাপকালে ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বসত ঘর ভাঙা হবে এটি মালিকপক্ষ জানায়নি। তাই প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও কর্মস্থলে চলে যাই। এখন এসে দেখি আমার সাজানো ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো।
এ সময় পাশে থাকা সালমা আক্তার বলেন, সকালে বাচ্চারা শুধু ডাল-ভাত খেয়েছে। দুপুরের রান্না বসাতে যাবো তখনই এই অবস্থা। এখন বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাচ্চারা না খাওয়া। আমার সাজানো সংসার সিটি করপোরেশন ভেঙে দিলো।
একই ভবনের দ্বিতীয় তলার আরেকটি কক্ষে ছিলেন মাজেদা খাতুন। তিনি বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগে আমাদের ভবনে ভাঙচুর শুরু হয়। ঘরের মালামালগুলো বের করতে সময় দেওয়া হয়নি।
ওই ভবনের মালিক আব্দুল আলিম তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভবনে সাতটা ফ্যামিলি ছিল। আমিও একই ভবনের একটি কোণে পরিবার নিয়ে বাস করতাম। আমাকে উচ্ছেদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। বিনা নোটিশে এভাবে পথে বসিয়েছে। তিনি বলেন, আমি যে জায়গায় ভবনটি করেছি সেটির ক্রয় সূত্রে মালিক। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঢাকা জেলা প্রশাসন আগেও সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সে অনুযায়ী, আমাদের ভবনটি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন আমাদের উচ্ছেদ করা হলো জানি না।
Advertisement
এমএমএ/এসএনআর/জিকেএস