শরীয়তপুরের ছয়টি উপজেলায় তিন লাখ গ্রাহকের প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৯০ মেগাওয়াট। সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে ৪৫ মেগাওয়াট। চাহিদা বেশি থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগকে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে ৮-১০ বার। প্রতিদিন গড়ে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এতে জেলাবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের। উৎপাদন কমেছে বিভিন্ন কলকারখানায়।
Advertisement
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় শরীয়তপুর গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (শপবিস)। জেলায় আবাসিক, বাণিজ্যিকসহ বিদ্যুতের বিভিন্ন পর্যায়ের তিন লাখ ৬৬ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। বিভিন্ন পর্যায়ের এসব গ্রাহকের জন্য প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৯০ মেগাওয়াট। তবে সরবরাহ কম থাকায় গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে ৪৫ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ দেওয়া হয় না। ফলে জেলার ছয়টি উপজেলায় দিনে-রাতে ৮-১০ বার লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও জেলায় একাধিকবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
শরীয়তপুর শহরের সৌদিয়ান মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী নাহিদ হাসান সৌরভ। আগে লোডশেডিং কম থাকায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি ছিল। তবে কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং বেশি হওয়ার আগের মতো ক্রেতা পাচ্ছেন না এই বিক্রেতা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের জ্বালায় আমাদের বেচাবিক্রি কমে গেছে। প্রচণ্ড গরমে ক্রেতারা কষ্ট পাচ্ছেন। তাই আগের মতো দোকানে ক্রেতারা আসছেন না।’
আরও পড়ুন: এক ইউনিট বিকল, লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ বরিশালবাসীকলেজছাত্র আকাশ মিয়া বলেন, ‘দিনের বেলা কোনোরকম বিদ্যুৎ থাকলেও রাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকেতো দুই ঘণ্টাই থাকে না। সামনে আমার স্নাতক পরীক্ষা। এভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছি না।’
Advertisement
ভোজেশ্বর এলাকার গৃহবধূ ফাতেমা বেগম বলেন, ‘বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা। তীব্র গরমে ওদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ঘরে থাকাই এখন মুশকিল। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হোক।’
ওয়ার্কশপের মালিক নুর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো মাল ডেলিভারি দিতে পারছি। এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ চলে যায়। আমাদের কর্মচারীরাও বেকার বসে থাকে। আমাদের খুব লস হচ্ছে।’
জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মিতু আক্তার বলেন, ‘বর্তমানে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। রোগীদের চিকিৎসা সচল রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাইরে থেকে জেনারেটর ভাড়া করতে হচ্ছে। সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে হচ্ছে।’
জানতে চাইলে জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আলতাপ হোসেন বলেন, ‘জেনারেশন ফল্ট করায় চাহিদার তুলনায় জেলায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছি। তাই বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে প্রতিনিয়ত ১২ ঘণ্টা একটানা লোডশেডিং দিচ্ছি না। সার্কেল আকারে একঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি এক সপ্তাহর মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
Advertisement
বিধান মজুমদার অনি/এসআর/জেআইএম