ভারতের সঙ্গে সরকার ‘সার্বভৌমত্ব বিরোধী-অসম চুক্তি’ করার প্রতিবাদে আগামী ৫ জুলাই ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশ হবে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সাথে হওয়া এসব চুক্তির কোনোটাই বাংলাদেশকে লাভবান করবে না বরং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে। বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবেই নিজের অর্থ খরচ করে পরের জন্য এই ঝুঁকি নিতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের দাসখত দেওয়া সমঝোতা স্মারক ও চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে চীন-ভারতের আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক ব্যাটেল গ্রাউন্ড তৈরি করে ‘সবার সাথে বন্ধুত্বের’ সাংবিধানিক পররাষ্ট্রনীতি উপেক্ষা করা হয়েছে।’
‘গণতন্ত্র মঞ্চ অবিলম্বে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্নকারী সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি বাতিল করতে আহ্বান জানাচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী, অসম চুক্তির প্রতিবাদে আগামী ৫ জুলাই সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী বক্তব্য দেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভারতের সাথে হওয়া এসব চুক্তির কোনোটাই বাংলাদেশকে লাভবান করবে না বরং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে। বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবেই নিজের অর্থ খরচ করে পরের জন্য এই ঝুঁকি নিতে পারেনা। ইন্ডিয়ান রাষ্ট্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক বিকাশকে রুদ্ধ করতে চায়। কারণ দক্ষিণ এশিয়াকে একটা পিপলস ফেডারেশন ইউনিয়নে পরিণত করার ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু ইন্ডিয়া তা হতে দিতে চায় না। এজন্যই তারা সার্ককে পরিকল্পিতভাবে অকার্যকর করে রেখেছে।’
ট্রান্স-এশিয়ান কানেকটিভিটিকে কার্যকর করার পক্ষে কিন্তু শুধুমাত্র ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার একপাক্ষিক এই ধরনের উদ্যোগে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার বিরোধিতা করে সবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশের মর্যাদাকে ভূলণ্ঠিত করে সরকার যেসব অসম চুক্তি করছে সেটার তো একটা বিনিময় আছে, এই চুক্তির বিনিময়ে তারা গদিতে থাকতে চান। ভারতকে নানাভাবে ট্রানজিট-করিডোর কিংবা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথ গবেষণা, ইত্যাদি চুক্তির নামে প্রকারান্তরে মোংলা বন্দর ভারতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান।’
Advertisement
‘উদারভাবে ভারতকে সহযোগিতার মাধ্যমে বর্তমান ডামি সরকার ভারতের সহায়তায় নিজেদের গদি রক্ষা করতে চায়। বাংলাদেশ-ভারত সমমর্যাদা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে লেনদেন হবে এর মধ্যেতো সাধারণভাবে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার সহায়তার বিনিময়ে বাংলাদেশকে ভারতের একটি অংশ হিসেবে ভারত যেভাবে পশ্চিমবাংলা কিংবা অন্য প্রদেশকে ব্যবহার করে সেভাবে বাংলাদেশকে ব্যাবহার করবে এটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করে।’
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে বলা হয়, ‘পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহু বছর কথাবার্তা হচ্ছে। একমাত্র গঙ্গা চুক্তি ছাড়া আরও যে ৫৩টি যৌথ নদী আছে, সেগুলোর কোনোটা নিয়ে আমরা চুক্তি করতে পারিনি। তিস্তার চুক্তি ২০১১ সালে প্রস্তুত হলেও তা সই হয়নি। এই চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি। এর সঙ্গে আমাদের উত্তরাঞ্চলের দুই কোটি মানুষের ভাগ্য জড়িত।’
‘এ চুক্তির বিষয়ে ভারতের দিক থেকেও অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু এবার ঘোষণায় এ চুক্তি নিয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। নদী অংশীদার হিসেবে পানির হিস্যা আমাদের অধিকারের বিষয়। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এই সফরে তিস্তার পানি বণ্টন নয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়েছে। যাদের হাতে তিস্তা ধ্বংস হয়েছে তাদেরকেই তিস্তা ব্যবস্থাপনার অংশীদার করার আলাপ করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের. আবু ইউসুফ সেলিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন, গণসংহতি আন্দোলনের মনির উদ্দিন পাপ্পু, জেএসডির কে এম জাবের, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজ্জাক সজীব ছিলেন।
কেএইচ/এমআরএম/জেআইএম