ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসার পর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। লোক মারফত যোগদানের চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন।
Advertisement
পদ হারানো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউরের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। গুঞ্জন আছে, তিনি বিদেশে চলে গেছেন।
অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে টানা অনুপস্থিত থাকলে কিংবা বিনা অনুমতিতে বিদেশে চলে গেলে সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তির মুখে পড়তে হয়। এক্ষেত্রে মতিউরকেও শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।
এদিকে গুঞ্জন রয়েছে মতিউর রহমান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে যোগদান করে ছুটি নিয়েছেন। তবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
Advertisement
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা শুনেছি মতিউর রহমান মন্ত্রণালয় এসে যোগদান করেছেন। তবে উনি এখনো সচিবালয়ে আসেননি। ছুটিতে আছেন কি না সে বিষয়টিও আমরা জানি না।
আর এক কর্মকর্তা বলেন, মতিউর রহমান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে যোগদান করলে তাকে অবশ্যই অফিস করতে হবে। স্বশরীরে অফিসে এসে হাজিরা দিতে হবে। হাজিরা না দিলে অনুপস্থিত হিসেবে বিবেচিত হবেন।
তিনি আরও বলেন, মতিউর রহমান উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছেই রিপোর্ট করবেন। সুতরাং তিনি যোগদান করে ছুটিতে আছেন নাকি সে বিষয়টি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবই বলতে পারবেন। ছুটিতে থাকলে অবশ্যই দালিলিক প্রমাণ থাকতে হবে। মৌখিকভাবে ছুটি নিলে তা গ্রহণযোগ্য না।
মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১২ লাখ টাকায় ছাগল কেনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই তা ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়। এরপর বেরিয়ে আসে এই কর্মকর্তা ও তার পরিবারের অঢেল অবৈধ সম্পদের খবর।
Advertisement
মতিউর রহমানকে সর্বশেষ ঈদের দ্বিতীয় দিন (১৮ জুন) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ইন্টারভিউতে দেখা যায়। এরপর বসুন্ধরা, ধানমন্ডিসহ মতিউরের বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি তার। এমনকি কোরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর এনবিআর কার্যালয়ে আসেননি।
ঈদের পর গত ২৩ জুন মতিউর রহমানকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে মতিউর রহমানকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার অর্থ হলো তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। সংস্থাপন বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য ওএসডি করার বিধান আছে। এর বাইরে অন্য বিভাগ, সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের জন্য ওএসডির বদলে সংযুক্ত করার পদ্ধতি চালু আছে। মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে সেটিই করা হয়েছে।
অনুপস্থিতির যে শাস্তির কথা আছে বিধিমালায়‘সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালা, ২০১৯’-এ বলা হয়েছে- কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী নিজ কাজে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। এ বিধান লঙ্ঘন করলে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে প্রতিদিনের অনুপস্থিতির জন্য এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটতে পারবে।
কোনো সরকারি কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে এ অপরাধ (বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিতি) একাধিকবার করলে কর্তৃপক্ষ কর্মচারীর সর্বোচ্চ সাত দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটতে পারবে।
তবে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এ বলা হয়েছে- ৬০ দিন বা এর চেয়ে বেশি সময় বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা বা বিনা অনুমতিতে দেশ ত্যাগ এবং ৩০ দিন বা এর চেয়ে বেশি সময় বিদেশের অবস্থান করা ‘পলায়ন’ হিসেবে গণ্য হবে। ‘পলায়ন’ এর ক্ষেত্রে তিরস্কার ছাড়া যেকোনো দণ্ড দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন দ্বিতীয় স্ত্রীর পর দেশ ছাড়লেন মতিউর মতিউর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক-বিও হিসাব স্থগিত এনবিআরের পদ থেকে সরানো হলো মতিউরকে মতিউর, তার স্ত্রী ও ছেলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাবিধিমালায় সরকারি কর্মকর্তার-কর্মচারীদের বিভিন্ন অপরাধের জন্য লঘু এবং গুরুদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তিরস্কার পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, দায়িত্বে অবহেলার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ আদায়, বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হচ্ছে লঘুদণ্ড।
অন্যদিকে গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা।
কেউ পলায়ন করলে তিরস্কার ছাড়া বাকি শাস্তিগুলোর যে কোনো একটি দেওয়া যাবে বলে বিধিমালা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে মতিউরের জন্য আলাদা কোনো কক্ষ নেই। এমনকি তার বসার জন্য কোনো চেয়ার-টেবিলও নেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার পর তিনি মন্ত্রণালয়েও আসেননি। সংযুক্ত থাকা কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট বসার জায়গা না থাকলেও তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গুঞ্জন রয়েছে, রোববার (২৩ জুন) বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর ভারত চলে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত থেকে সরাসরি দুবাই চলে যেতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করেছে। এছাড়া তিনি হারিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদও।
জানা গেছে, ঈদের পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়া চলে গেছেন ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মুশফিকুর রহমান ইফাত, তার বোন ইফতিমা রহমান মাধবী ও তার মা শাম্মী আকতার। ইফাত মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান।
আরএমএম/এমআরএম/জিকেএস