সুরা মাআরিজ কোরআনের ৭০তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৪৪, রুকু সংখ্যা ২। সুরা মাআরিজ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কার কাফেররা কেয়ামত, আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে বিদ্রূপ ও উপহাস করতো এবং নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই মর্মে চ্যালেঞ্জ করতো যে, তুমি সত্যবাদী হলে আল্লাহর আজাব নিয়ে এসো। সুরা মাআরিজে তাদের এ চ্যালেঞ্জের জবাব দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
সুরা মাআরিজের আলোচ্যবিষয় কাফেরদের অবিশ্বাস, পরিণতি, আখেরাত, কেয়ামত, জাহান্নামের শাস্তি, মানুষের বিভিন্ন মন্দ স্বভাব, মুমিনদের উত্তম বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি।
সুরা মাআরিজের ১৯-৩৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,(১৯)إِنَّ الْإِنْسَانَ خُلِقَ هَلُوعاً
ইন্নাল ইনসানা খুলিকা হালূআ।মানুষ তো সৃজিত হয়েছে খুবই অস্থিরচিত্তরূপে।
Advertisement
(২০)إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعاً
ইযা মাসসাহুশ শাররু জাঝূআ।যখন কোন কষ্ট আসে, তখন সে অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়ে।
(২১)وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعاً
ওয়া ইযা মাসসাহুল খাইরু মানূআ।আর যখন তার স্বাচ্ছন্দ্য আসে, তখন হয় অতি কৃপণ।
Advertisement
(২২)إِلَّا الْمُصَلِّينَ
ইল্লাল মুসাল্লীন।তবে নামাজিগণ নয়
(২৩)الَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلاتِهِمْ دَائِمُونَ
আল্লাযীনা হুম আলা সালাতিহিম দাইমূন।যারা তাদের নামাজ আদায় করে নিয়মিত।
(২৪)وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ
ওয়াল্লাযীনা ফী আমওয়ালিহিম হাক্কুম মালূম।এবং যাদের অর্থ-সম্পদে নির্ধারিত হক আছে
(২৫)لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
লিসসাইলি ওয়াল মাহরূম।ভিখারি ও বঞ্চিতের জন্য।
(২৬)وَالَّذِينَ يُصَدِّقُونَ بِيَوْمِ الدِّينِ
ওয়াল্লায়ীনা ইউসাদ্দিকূনা বিইয়াওমিদ্দীন।যারা কর্মফল দিবসকে সত্য বলে জানে
(২৭)وَالَّذِينَ هُمْ مِنْ عَذَابِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম মিন আযাবি রাব্বিহিম মুশফিকূন।এবং যারা তাদের প্রতিপালকের শাস্তির ভয়ে ভীত।
(২৮)إِنَّ عَذَابَ رَبِّهِمْ غَيْرُ مَأْمُونٍ
ইন্না আযাবা রাব্বিহিম গাইরু মামূন।নিশ্চয়ই তাদের প্রতিপালকের শাস্তি এমন নয়, যা থেকে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
(২৯)وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
ওয়াল্লাযীনাহুম লিফুরূজিহিম হাফিজূন।এবং যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে,
(৩০)إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
ইল্লা আলা আযওয়াজিহিম আও মা মালাকাত আইমানুহুম ফাইন্নাহুম গাইরু মালূমীন।তাদের স্ত্রী বা অধিকারভুক্ত দাসীরা ছাড়া, এদের ক্ষেত্রে তারা নিন্দিত হবে না।
(৩১)فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
ফামানিবতাগা ওয়ারাআ যালিকা ফাউলাইকা হুমুল আদূন।তবে কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী।
(৩২)وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম লিআমানাতিহিম ওয়া আহদিহিম রাঊন।এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে,
(৩৩)وَالَّذِينَ هُمْ بِشَهَادَاتِهِمْ قَائِمُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম বিশাহাদাতিহিম কাইমূন।আর যারা তাদের সাক্ষ্যদানে অটল,
(৩৪)وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম আলা সালাতিহিম ইউহাফিজূন।এবং যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে পুরোপুরি যত্নবান থাকে।
(৩৫)أُولَئِكَ فِي جَنَّاتٍ مُكْرَمُونَ
উলাইকা ফী জান্না-তিম মুকরামূন।তারাই থাকবে জান্নাতে পরম সম্মানিত অবস্থায়।
এ আয়াতগুলো থেকে আমরা যে শিক্ষা ও নির্দেশনা পাই:১. বিপদে পড়লে অস্থির হয়ে হা-হুতাশ শুরু করা, আল্লাহর সাহায্য ও রহমত থেকে নৈরাশ্য প্রকাশ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে আশাবাদী থাকা উচিত।
২. আল্লাহ তাআলা স্বচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য দান করলে সেজন্য তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং পরিবার-পরিজনদের জন্য ব্যয় করার পাশাপাশি সম্পদের জাকাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ সম্পদ দান করার পরও কৃপণতা করা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে খরচ না করা নিন্দনীয় কাজ।
৩. মানুষের অন্তরে যখন ঈমান দৃঢ় হয় এবং নামাজ, জাকাতসহ নেক আমলসমূহের ব্যাপারে সে যত্নবান হয়, তখন তার মধ্যে ধৈর্য ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়, অস্থিরতা কমে যায়।
৪. জান্নাতি মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হলো, নিয়মিত নামাজ আদায় করা, জাকাত দেওয়া ও নফল সদকা করা, আখেরাতের জীবনে বিশ্বাস রাখা, আল্লাহর শাস্তির ভয় করা, যৌন অপরাধে না জড়ানো, আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ইত্যাদি।
ওএফএফ/জিকেএস