কৃষি ও প্রকৃতি

আনারসে বদলে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের অর্থনীতি

সুনামগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় বছরে বছরে বাড়ছে আনারসের উৎপাদন। এতে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন চাষিরা; অন্যদিকে বদলাতে শুরু করেছে দুর্গম এলাকার অর্থনীতির চাকা। চলতি মৌসুমে শুধু পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকার আনারস উৎপাদিত হবে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শান্ত ও ছায়াঘেরা গ্রাম হাসাউড়া। গ্রামজুড়ে অসংখ্য টিলা। প্রতিটি গাছে পাখির কিচির মিচির। গ্রামজুড়ে নিশ্চিন্ত মনে মালিককে পিঠে চড়িয়ে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে হাতি। তার পেছনে সঙ্গ দিচ্ছে শিশুরা। একসময় পাহাড়ি এ গ্রামকে কেউ চিনতো না। তবে এখন রসালো আনারসের জন্য পরিচিতি পেয়েছে পাহাড়ি সীমান্তবর্তী এ গ্রাম।

সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের গ্রাম হাসাউড়া। এ গ্রাম ছাড়াও আশেপাশের চারটি গ্রামের মানুষ আনারস চাষ করেন। মূলত হাসাউরা, পেচাকোনা, বানাইগাঁও, দর্পগ্রাম, মাঠগাঁও গ্রাম মিলে আছে শতাধিক পাহাড়ি পতিত টিলা। হাসাউরা থেকে শুরু হয়ে এ টিলা শেষ হয় মাঠগাঁও গিয়ে। সেই সঙ্গে পাঁচ গ্রামের ২ শতাধিক চাষি আনারস চাষ করলেও প্রধান কেন্দ্র হাসাউড়া গ্রাম। তাই সুনামগঞ্জে ‘হাসাউড়ার আনারস’র বিশেষ খ্যাতি আছে সারাদেশে।

পাহাড়ি অঞ্চলের রসে, ঘ্রাণে ও স্বাদে ভরা আনারস এরই মধ্যে সুনামগঞ্জ শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকার হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে আকার অনুযায়ী এসব আনারস ২৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুনবেড়েছে আমের উৎপাদন, আসছে বিদেশি অর্থ

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, হাসাউড়াসহ আশেপাশের এলাকায় প্রায় ১২০ হেক্টর জায়গায় একশ’র বেশি টিলায় আনারসের বাগান আছে। এসব এলাকায় ২ শতাধিক কৃষক আছেন, যারা আনারস চাষ করেন। মে মাসের শেষ থেকে জুন মাস পর্যন্ত টিলা থেকে আনারস সংগ্রহ করেন চাষিরা। সেই সঙ্গে চলতি মৌসুমে এসব টিলায় প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৬ কোটি টাকা। ফলে অন্য বছর থেকে এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। এমনকি আনারসের ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি বদলে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতি।

চাষিরা জানান, পাহাড়ি টিলার পতিত জায়গায় আনারস চাষ করে তারা অনেক লাভবান। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

আনারস চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় হাসাউড়া গ্রামকে কেউ চিনতো না। আমরা পাহাড়ের পতিত জমিতে আনারস চাষ করে সারাদেশে আমাদের গ্রামকে চিনিয়েছি।’

আরও পড়ুনপরীক্ষামূলক আঙুর চাষে সফল রাজবাড়ীর সরোয়ার

আরেক চাষি বাহার মিয়া বলেন, ‘পাহাড়ি মাটি খুব ভালো। যার ফলে এ এলাকার মানুষ আনারস চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।’

Advertisement

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘পাহাড়ি পতিত মাটিতে চাষিরা আনারস উৎপাদন করছেন। আমরা তাদের সব সময় সহযোগিতা করছি। এ আনারস চাষ করে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন; তেমনই এলাকার অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে।’

এসইউ/জেআইএম