তামাকে ৭ হাজার কেমিক্যাল রয়েছে, যার মধ্যে ন্যূনতম ৭ থেকে ৮টি উপাদান সরাসরি ক্যানসারের জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি আরও বলেন, তামাকখাত থেকে সরকার প্রতিবছর যে পরিমাণ ট্যাক্স পায় তার থেকে কয়েকগুণ বেশি তামাকজনিত চিকিৎসায় ব্যয় হয়।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ‘বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণ: সফলতা ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, তরুণদের তামাকের প্রতি আসক্ত করতে সিগারেট কোম্পানিগুলো সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট বিক্রি করছে। যাতে সহজেই তরুণরা সিগারেট কিনতে পারে। তরুণদের আসক্ত করতে পারলে তারা অনেকদিন ব্যবসা করতে পারবে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘বিদ্যমান তামাক আইন সংশোধনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আইন সংশোধনের ব্যাপারে আগ্রহী।’
Advertisement
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। একই সঙ্গে তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি।
আরও পড়ুন:
ক্যানসার হবে কি না জানতে পারবেন ৭ বছর আগেই ক্যানসার আক্রান্ত ৮০ শতাংশ শিশুই চিকিৎসায় সুস্থ হয় ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে ৭৫ শতাংশের বেশিবাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় চিকিৎসকরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। দেশের মানুষদের তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে বিএমএ।
Advertisement
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। তাই এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. মাহিন মালিক, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল টোব্যাকো ব্র্যাঞ্চের প্রধান ড. ইন্দু আহলুওয়ালিয়া, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তারেক মেহেদী পারভেজ, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সন্ধ্যানী, প্ল্যাটফর্ম অব ডেন্টাল অ্যান্ড মেডিকেল সোসাইটির প্রতিনিধিসহ আরও অনেকে।
এএএম/এসএনআর/এএসএম