অসুস্থতার জন্য চাকরি ছাড়তে হয় মতিউর রহমান রতনের। দীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকার পর নিজেই কিছু করার চেষ্টা করেন। একটিমাত্র সেলাই মেশিন দিয়ে ঘরে বসেই কাজ শুরু করেন তিনি। অবশেষে হাতে ধরা দিয়েছে সফলতা।
Advertisement
স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই গড়ে তুলেছেন ছোট একটি গার্মেন্টস। সেখানে সাতটি সেলাই মেশিনে কাজ করেন কর্মচারীরা। এখন প্রতিমাসে তিন লাখ টাকার তৈরি পোশাক পাইকারিতে বিক্রি করেন রতন।
শরীয়তপুরের মৌলপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব সারেঙ্গ গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদ মাদবর ও মৃত আমেনা বেগমের ছেলে মতিউর রহমানের ছেলে রতন। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। স্ত্রী নাসরিনা মলি ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ে রেনেসা রহমান মাদারীপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে রিনি রহমান পড়ে প্লে শ্রেণিতে।
কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকায় ভিনটেক্স গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রোডাকশন ম্যানেজার (পিএম) হিসেবে চাকরি করেন রতন। পরে হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক পরামর্শ দেন দীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকতে হবে। কোনো ধরনের চাপ নেওয়া যাবে না। তাই বাধ্য হয়েই চাকরি ছাড়তে হয় রতনকে। এরপর তিনি পরিবার নিয়ে মাদারীপুরে চলে আসেন। অনেক ভেবেচিন্তে স্ত্রী নাসরিনা মলিকে সঙ্গে নিয়ে নতুন করে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। যেহেতু তার এই ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা আছে, তাই সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি মেশিন দিয়ে নিজেই পোশাক বানানো শুরু করেন।
Advertisement
২০২৩ সালের মে মাসে মাদারীপুর শহরের আচমত আলী খান সড়কে বাসা ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকতে শুরু করেন। ভাড়া বাসার নিচতলার একটি রুম ভাড়া নিয়ে শুরু করেন ছোট্ট আকারে গামের্ন্টস ব্যবসা। নাম দেন ‘আর অ্যান্ড আর ফ্যাশন’। একটি মেশিন ও ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হয় পথচলা। ঢাকা থেকে গার্মেন্টস কাপড় (গেঞ্জি কাপড়) কিনে এনে নিজ হাতেই তৈরি করেন নানা ধরনের পোশাক। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য টিশার্ট, গেঞ্জি, পায়জামা, বাচ্চাদের জন্য ফুলপ্যান্ট ও হ্যাফপ্যান্ট, টাইস, টপস, প্লাজু, নিমা, ট্রাউজার, গেঞ্জিসহ নানা ধরনের পোশাক।
বর্তমানে রতনের মিনি কারখানায় সাতটি আধুনিক সেলাই মেশিন আছে। আছেন ছয়জন কর্মচারী। তৈরি পোশাক বিক্রি করেন ঢাকার দুটি শোরুম ও মাদারীপুরের মস্তফাপুর বাজারে। প্রতিমাসে তিন লাখ টাকার বিক্রি হয়। এতে লাভ থাকে ৪০-৫০ হাজার টাকা। পাইকারির পাশাপাশি খুচরাও পোশাক বিক্রি করেন রতন।
এ বিষয়ে উদ্যোক্তা মতিউর রহমান রতন বলেন, ‘ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করতাম। অনেক ভালো ছিলাম সেখানে। বেতনও বেশ ভালো ছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় চাকরিটা ছাড়তে হয়। তখন হতাশায় পড়ে যাই। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। যেহেতু গার্মেন্টেসের পোশাক তৈরি কাজের ব্যাপারে দক্ষ ছিলাম, তাই সেই কাজ শুরু করি। মাত্র ২০ হাজার টাকা ও একটি সেলাই মেশিন দিয়ে নিজ ঘরে বসে কাজ শুরু করি। পরে ধীরে ধীরে পরিধি বাড়তে থাকে। এখন আমার কারখানায় ছয়জন কাজ করেন। প্রতিমাসে বেচাকেনা তিন লাখ টাকার।’
তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আছে ব্যবসাটা আরও বড় করার। যাতে এখানকার বেকার মানুষকে কাজ দিতে পারি। তাদের যেন আর ঢাকায় গিয়ে কাজ করতে না হয়।’
Advertisement
মতিউর রহমান রতনের স্ত্রী নাসরিনা মলি বলেন, ‘এই ছোট্ট গার্মেন্টেস নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। এটাকে আমরা অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। অনেক নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই।’
‘আর অ্যান্ড আর ফ্যাশন’-এ কাজ করেন ফাহিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘সংসারের কাজ করে এখান থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার ভালোই চলে যায়। এখানে কাজ পাওয়ায় আমাকে আর ঢাকায় যেতে হয়নি। স্বামী ও সন্তান নিয়ে নিজ বাড়িতে থেকেই কাজ করতে পারছি।’
মাদারীপুরের স্থানীয় সংগঠন জাগো উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার বলেন, ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা গার্মেন্টসটি অল্পদিনেই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। আশা করছি তাকে দেখে অনেকেই এই ব্যবসায় এগিয়ে আসবেন।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, দিনদিন রতনের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। তাকে দেখে অনেক বেকার যুবক এগিয়ে আসবেন। এতে করে মাদারীপুরে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/জেআইএম