দেশজুড়ে

সাইকেল নয়, বাবার মরদেহটি একবার দেখতে চাই

‘আমার বাবা বিদেশে থাকতেন। কোরবানির ঈদের পরের দিন বাবার কাছে একটি সাইকেল চেয়েছিলাম। বাবা আমাকে কিনে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর সাইকেল চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে শেষবারের মতো একটু দেখতে চাই। আমার বাবার মরদেহটা দেশে এনে দিন।’ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল ছোট্ট আবির মাতুব্বর (৯)। শিশু আবির মাতুব্বরের বাবা মিলন মাতুব্বরের বাড়ি মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামে। তিনি সৌদি আরবে থাকতেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মিলন।

Advertisement

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরানোর জন্য ৫ বছর আগে সৌদি আরবে যান মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন মাতুব্বর। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজ। সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের হালুজারায় থেকে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেননি।

গত ১৮ জুন রাতে সৌদি আরবে বসবাসরত বাসায় ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলন। পরে একইসঙ্গে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানেই ৬ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

রোববার (২৩ জুন) দুপুরে সৌদি আরব থেকে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর পৌঁছায়। এরপর থেকে স্বজনদের মাঝে আহাজারি শুরু হয়। প্রতিবেশীরাও তার গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন।

Advertisement

শিশু আবির আরও বলে, আমি বড়। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছেন। আমি মাদরাসায় পড়ি। আমার বাবা সৌদিতে মারা গেছেন। এখন আমার মাদরাসার খরচ কে দেবেন। আমাদের দেখার মতো কেউ নেই। আপনারা আমার বাবাকে একটা নজর দেখার ব্যবস্থা করে দিন। আমি আমার বাবার মুখটা একবার দেখতে চাই। শেষবারের মতো আমি আমার বাবাকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাই।

মিলনের স্ত্রী বলেন, আমাদের দেখার মতো আর কেউ থাকলো না। ৩ শিশু ছেলেকে এখন কে দেখবে। আমরা প্রায় ২০ লাখ টাকার দেনার মধ্যে আছি। এই দেনা কীভাবে শোধ করবো। আমার স্বামীর মরদেহটি দেখতে চাই। কিন্তু সৌদি আরব থেকে টাকা খরচ করে মরদেহ দেশে আনার সামর্থ্য আমাদের নেই। সরকারের কাছে দাবি আমার স্বামীর মরদেহ যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন।

মৃত মিলনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন বলেন, মিলনের কয়েক লাখ টাকার দেনা আছে। তবে তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা চাই সরকার যেন মিলনের মরদেহটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন। আমরা অন্তত দেশের মানুষ তাকে দাফন করতে পারি।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে মরদেহ দেশে আনার চেষ্টা করবো।

Advertisement

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এফএ/জেআইএম