জাতীয়

দুর্নীতির মচ্ছব বন্ধে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ গঠন করুন: মেনন

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দুর্নীতির মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ গঠন করুন। দুর্নীতিবাজদের অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত ও বিচার করে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করুন।

Advertisement

সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

মেনন বলেন, এক নিষ্ঠুর অলিগার্করা দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই অলিগার্কির স্বার্থ রক্ষার্থে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত করেছে। এর থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, জন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাজেটে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না।

তিনি বলেন, নিউইয়র্কের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্স এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন ধনী উৎপাদনে ২০১০-২০১৯ সালে পৃথিবীর নেতৃস্থানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষভাগে কোটিপতি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি, যেটা ২০০০ সালেও ছিল মাত্র তিন হাজার ৪৪২টি। ওই হিসাব অনুযায়ী এই কোটিপতিদের এক শতাংশ ব্যাংকের মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশের মালিক। এ কথা বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের অবাক করা ধনী উৎপাদনে ঈর্ষান্বিত না হয়ে এটাকে ভালোভাবে নেওয়া উচিত। এই ধনই নিচের দিকে ট্রিকাল ডাউন করবে। এ যুক্তি গ্রহণ করা যেতো যদি এই সম্পদ দেশে বিনিয়োগ হতো। তা না হয়ে এই অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে দুই এমপি

তিনি বলেন, মার্কিন ফাইন্যান্সিয়াল ইনট্রিগেটি ইনস্টিটিউশন দেখিয়েছে, বছরে সাত বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডার বেগমপাড়ায়, মালেশিয়ার সেকেন্ড হোমে, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের আধুনিক শপিংমল, রিয়েল এস্টেট ও হুন্ডি ব্যবসায়। এই টাকার লভ্যাংশও দেশে আসছে না। পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নাই। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনির যে আয়দেশে পাঠায় তার ওপর কর বসানো হচ্ছে। তাদের বিদেশযাত্রা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই অর্থ-সম্পদ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া।

মেনন বলেন, ২০০৯ সালে ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার ঋণ এখন এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। পুনঃতফসিলীকরণ ও অবলোপন ধরলে এর পরিমাণ চার থেকে পাঁচ লাখ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াবে। এই বছরের প্রথম প্রান্তিকেই ৩৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর পুরোটার কথা আগেই বলেছি। আমরা নই কেবল, একজন শিল্পোদ্যোক্তা সংসদ সদস্য টেলিভিশনে বলছেন ৪/৫ জন লোক ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। আর ব্যাংকের নৈরাজ্য ও লুট বন্ধ করতে অর্থমন্ত্রী সংসদ কতৃর্ক পাস করা যে ব্যাংক সংশোধন আইনের কথা উল্লেখ করেছেন তাও একই স্বার্থে প্রণীত। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠন করার প্রতিশ্রু তি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত। পরের অর্থমন্ত্রী তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর এখন ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তুগলকি কাণ্ড করছে।

আরও পড়ুন

Advertisement

অব্যাহতির আবেদন বেনজীরের, দুদকের না

রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি দেশের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বিএনপি আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিশ্ব সূচকে আমাদের সেই কলঙ্ক দূর হলেও ওই সূচকে বাংলাদেশ এখনো শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সম্প্রতি যে চিত্র বেরিয়ে আসছে। তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করছে।

‘এ কথা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে সাবেক পুলিশ প্রধান ও সেনা প্রধানের দুর্নীতির চিত্র হিমশৈলের ক্ষুদ্র উপরিভাগ মাত্র। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। দুর্নীতির এই মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই বিশেষ কমিশন গঠন করুন, দুর্নীতিবাজদের অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত, বিচার করে কঠিনতম শাস্তি দিন। ঋণখেলাপি, অর্থ আত্মসাতকারীদের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করুন।’

তিনি বলেন, আমি জানি উন্নয়নের বেদনা আছে। সেই বেদনা যদি চোখের সামনে দেশের সম্পদ লুট করার কারণে হয় তবে সেটা গ্রহণ করা যায় না। ওই লুটের টাকাকে যখন সাদা করার জন্য সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের চেয়ে অর্ধেক কর দিয়ে সাদা করার প্রস্তাব করা হয় তখন সেটা সততার জন্য তিরস্কার ও অসততার জন্য পুরস্কারের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা কেবল অসার নয়, এ প্রসঙ্গে সরকারের অতীত অবস্থানের বিপরীত। খালেদা জিয়ার জন্য যেটা অনৈতিক, বর্তমানেও সেটা অনৈতিক। আশা করি অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সংসদকে এর দায়ভার থেকে রেহাই দেবেন।

আইএইচআর/ইএ/জিকেএস