‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচনায় আসার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা (কাস্টমস ও ভ্যাট) ড. মো. মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পদ থেকে অপসারণের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তার জায়গায় পরিচালক হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
Advertisement
সোমবার (২৪ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পৃথক দুটি চিঠিতে মতিউর রহমানকে অপসারণ এবং আবু ইউসুফকে নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
নিয়োগের চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফকে যোগ দেওয়ার তারিখ থেকে তিন বছর মেয়াদে সোনালী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১–এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে মোহাম্মদ আবু ইউসুফের পরিচালক হিসেবে যোগদানের তারিখ আবশ্যিকভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানানোর জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
Advertisement
অপরদিকে মতিউরকে অপসারণের চিঠিতে বলা হয়েছে, ড. মো. মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পদ থেকে অপসারণের সুপারিশসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
আরও পড়ুন‘ছাগলকাণ্ড’: মতিউরের দায়িত্বে সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসসোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও সরানো হচ্ছে মতিউরকেএনবিআরের পদ থেকে সরানো হলো মতিউরকেএর আগে কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের কর্মকর্তা সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে। তিনি কাস্টমস, এক্সইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সদস্য (টেকনিক্যাল)।
সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। উপসচিব মকিমা বেগম সই করা এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী অর্থ বিভাগ কর্তৃক সময় সময় জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হারে ও শর্তে কার্যভার ভাতা পাবেন। অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ শব্দদ্বয় যোগ করবেন।
এদিকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্তি করা হলেও তার জন্য মন্ত্রণালয়ে আলাদা কোনো কক্ষ নেই। এমনকি তার বসার জন্য চেয়ার-টেবিলও নেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার পর তিনি মন্ত্রণালয়েও যাননি। তবে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে যোগদানপত্র পাঠিয়েছেন।
Advertisement
ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসার পর মতিউর রহমানকে সবশেষ ঈদের দ্বিতীয় দিন (১৮ জুন) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ইন্টারভিউতে দেখা যায়। এরপর বসুন্ধরা, ধানমন্ডিসহ মতিউরের বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি তার। এমনকি কোরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর এনবিআর কার্যালয়ে যাননি। গুঞ্জন রয়েছে, রোববার (২৩ জুন) বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারত চলে গেছেন মতিউর।
এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে পারেন মতিউর রহমান। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে।
এমএএস/জেডএইচ/জেআইএম