আন্তর্জাতিক

তিস্তা-গঙ্গার পানি বণ্টন হলে ভারতজুড়ে আন্দোলন চলবে: মমতা

বাংলাদেশকে তিস্তা ও গঙ্গা নদীর পানি দেওয়ার বিষয়ে ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তার অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়েই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশকে পানি দিতে চাইছে। এমন পরিস্থিতিতে মমতার হুঁশিয়ারি, কেন্দ্র যদি একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই ভারতজুড়ে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

Advertisement

সোমবার (২৪ জুন) রাজ্য সরকারের সচিবালয় ‘নবান্নে’ এক বৈঠক থেকে মমতা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের পানি বিক্রি করে দিচ্ছে। সিকিম যখন তিস্তা নদীর উপর ১৪টা হাইড্রো পাওয়ার (জলবিদ্যুৎ) করেছে, তখন তারা (কেন্দ্র সরকার) চোখে দেখেনি। আর এখন বলছে সব পানি দিয়ে দাও। দিতে তো আপত্তি নেই, কিন্তু আমার থাকলে তো দেবো! আমি বন্ধুত্ব করতে চাই, কিন্তু রাজ্যকে বিক্রি করে দেওয়ার স্বার্থে নয়।'

আরও পড়ুন: 

গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনা করায় বেজায় চটেছে মমতার দল বাংলাদেশ-ভারত ১০ সমঝোতা স্মারক ও নথি সই তিস্তার পানি নিয়ে আলোচনায় ভারতের কারিগরি দল আসা খুবই ইতিবাচক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে যথেষ্ট ভালোবাসি। তাদের জন্য আমরা ছিটমহল করে দিয়েছি। আমি নিজে যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন ভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্ভিস করে দিয়েছি। বাস সার্ভিস চালু করেছি।

Advertisement

‘পানির আরেক নাম জীবন। কেন্দ্রীয় সরকার জানে না যে উত্তরবঙ্গের একাংশের মানুষ আগামী দিনে খাবার পানি পাবে না। তিস্তায় পানি নেই। ভাবছে গায়ের জোরে উত্তরবঙ্গে জিতেছে বলে, সেখানকার মানুষকে বঞ্চিত করবে।’

এসময় মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেন্দ্র যদি আমাদের কথা না শোনে ও একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে বাংলা জুড়ে আন্দোলন চলবে, দেশজুড়ে আন্দোলন চলবে।

আরও পড়ুন: 

বাংলাদেশিদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা চালু করবে ভারত কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে দুই বাংলাদেশি নিখোঁজ ভারতে বিষাক্ত মদপানে ৩৭ জনের মৃত্যু

মমতার অভিমত, পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনা ও এখানকার পানি বিক্রি দেওয়ার অর্থ হলো- আগামী দিন গঙ্গার ভাঙন আরও বাড়বে। মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাবে। এমনিতেই ফারাক্কায় ড্রেজিং করা হয় না। ফলে কলকাতা বন্দর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের না জানিয়ে ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে।

Advertisement

‘আমাদের বাদ দিয়ে আগেই এই বিষয়গুলো নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। ফারাক্কা চুক্তির কারণে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে কষ্ট ভোগ করছি। আবার এই চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাওনা টাকাও আমাদের দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: 

টাকা খরচের পথ পাচ্ছেন না দম্পতি, চান পরামর্শ মোদীর সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি নিয়ে আলোচনায় ভারতের কারিগরি দল আসা খুবই ইতিবাচক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আত্রাই নদীর উপর বাংলাদেশে নিজেদের সীমানায় বাঁধ দিয়েছে। তা নিয়ে মমতা বলেন, আত্রাই নদী দিয়ে একটা সময় পানি আসতো। যার ফলে বালুরঘাট তথা গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষ উপকার পেতো। কিন্তু চীনকে দিয়ে বাংলাদেশ সেখানে একটা বাঁধ তৈরি করে পানি আসা পুরোটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বার বার চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সই হলেও, আরও বেশ কয়েকটি নদীর পানি বণ্টন চুক্তি আলোচনায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- তিস্তার পানি বন্টন। ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তি সইয়ের বিষয়ে সব প্রস্তুতি নেওয়া হলেও, মমতা ব্যানার্জীর বিরোধিতায় চুক্তিটি বাস্তবে রূপ নেয়নি বলে মনে করা হয়।

ডিডি/এসএএইচ