একাত্তরের আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের করা মামলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ‘সব তথ্য বিবেচনা না করে’ রায় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রায়ে সঠিক তথ্য পুরোপুরি উঠে আসেনি দাবি করে এ রায়কে তিনি ‘পক্ষপাতমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন।
Advertisement
রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের এক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে যুক্তরাজ্যে পলাতক আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে চার বছর আগে তিনি একটি মানহানি মামলা করেন। হাইকোর্ট সেই মামলা বাতিল করলেও সম্প্রতি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত। এ রায়ের ফলে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান।
৬০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চেয়ে চার বছর আগে করা ওই মামলার বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি লর্ড রিড সর্বসম্মতভাবে রায় দেন।
Advertisement
রায়ে আদালত বলেন, ‘আদালতের কার্যপ্রণালির অপব্যবহারের’ কারণ দেখিয়ে মুঈনুদ্দীনের করা মামলা খারিজ করে উচ্চ আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মুঈনুদ্দীন যে অভিযোগ নিয়ে আদালতে এসেছেন, তার বিচার চলবে।
এরই মধ্যে রায়ের অনুলিপি যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে মামলার পূর্বাপর বর্ণনা রয়েছে।
অপর এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমি রায়টা পড়েছি। রায়ের কোথাও বলা নেই যে, এই আদালত (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল) রায় দিয়েছে, এটি কাগুজে, তথ্যভিত্তিক নয়। এর ব্যাপারে ক্রিটিসিজম করেছে এটা কিন্তু কোথাও নেই।
তিনি বলেন, আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রায়টি পড়েছি। রায়ের কোথাও বাংলাদেশের সমালোচনা করা হয়নি। তবে একটা জায়গায় আমি রায়টিকে কিছুটা পক্ষপাতমূলক মনে করি। তাই আমি মনে করি যে রায়টি দেওয়া হয়েছে তা সব তথ্য বিবেচনা না করে দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অন্যরা বক্তব্য দেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় পক্ষে আদালতের রায় পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে তার পক্ষে রায় দেন। যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট এবং আপিল আদালত এর আগে তার মামলাটি খারিজ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট ওই আদালতের সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, মুঈনুদ্দীনকে বিচার প্রক্রিয়ায় তার দাবি বহাল রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত।
২০২০ সালে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ করে ৬০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছিলেন। প্রীতি প্যাটেল মুঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ করে টুইটারে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন।
এর আগে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্টার টেররিজম কমিশনের ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত’ হয়েছেন। তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ১৯৮৪ সাল থেকে একজন ব্রিটিশ নাগরিক। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ তিনি বরাবর ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে আসছেন।
২০১৩ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুঈনুদ্দীনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের কিছু পরে আলবদর নেতা মুঈনুদ্দীন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। পরবর্তীসময়ে তিনি যুক্তরাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম