পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পরকীয়ার অপবাদে হযরত আলী (৪৩) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ওই নেতা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। এ ঘটনায় গত ১৯ জুন তিনি বাদী হয়ে ৭ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১২ জনের নামে কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন।
Advertisement
হযরত আলী উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, হযরত আলী দীর্ঘদিন ধরে ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের শাহ জামালের সঙ্গে বর্গাভাগী গরুর ব্যবসা করেন। গত ১৭ জুন সোমবার ঈদের দিন রাত দশটায় তিনি জামালের বাড়ি থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে নিজ বাড়ি মহিপুরের সুধীরপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এসময় তার সঙ্গে ফুফাতো ভাই ইয়াকুব ও মোটরসাইকেল চালক ছিলেন। তারা ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে তাকে এবং সঙ্গে থাকা অপর দুই জনের হাত, পা ও মুখ বেঁধে পার্শ্ববর্তী বিলের মধ্যে নিয়ে যান ১৯-২০ জন ব্যক্তি। পরে তাকে ওই এলাকার মাসুম, মামুন খলিফা, সবুর, বশার, এখলাছ, মহায়মিন ও সুধীরপুর গ্রামের মামুন হাওলাদার মারধর শুরু করেন।
এক পর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। এসময় শাহ জামালের মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া আছে বলে জোরপূর্বক স্বীকার করান এবং বিবস্ত্র অবস্থায় মোবাইলে ভিডিও করে রাখেন। রাত আড়াইটার দিকে একটি মোটরসাইকেল ডেকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে আরও দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছেন হামলাকারীরা। পরকীয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন শাহ জামাল ও তার মেয়ে।
Advertisement
হাসপাতালের বিছানায় হযরত আলী বলেন, ‘আমার সঙ্গে শাহ জামাল ভাইয়ের গরুর ব্যবসা নিয়ে সম্পর্ক। এছাড়া অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা আমাকে আমাকে উলঙ্গ করে স্পর্শকাতর স্থানেও মারধর করেছে। রাতভর রড দিয়ে পিটাইছে। মারধরের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ওরা ভিডিও করার সময় যা বলতে বলেছে আমি তাই বলেছি। আমার সঙ্গে থাকা ফুফাতো ভাই ইয়াকুবকেও মারধর করেছে ও সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়া গেছে। সুধীরপুর গ্রামের মামুন হাওলাদের নেতৃত্বেই আমাকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি ছোট থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে শাহ জামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার যে মেয়ের কথা বলা হয়েছে তার তিন মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আমার বড় নাতনি বিয়ের উপযুক্ত। সুধীরপুর গ্রামের মামুন হাওলাদারের সঙ্গে হযরত আলীর পুরনো বিরোধ আছে। এ ঘটনায় আমাদের এলাকার কিছু উশৃঙ্খল ছেলেদের নিয়ে তাকে রাতভর পাশবিক নির্যাতন চালান। হযরত আলীকে ঈদের রাতে আমিই দাওয়াত দিয়েছিলাম এবং গরুর টাকা নিয়ে যেতে বলেছি। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে যে অপবাদ আনা হয়েছে আমি এর কঠোর বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে প্রধান অভিযুক্ত মামুন হাওলাদার বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্তা নেই।’
Advertisement
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার তালুকদার বলেন, মামলার কপি হাতে পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এফএ/এমএস