‘কেমন আছো? কতদিন তোমাকে দেখি না, মরিচা পড়া ডাকবাক্সে চিঠি দিও রোজ, খামভর্তি প্রেম দিও, রাখিও একটু খোঁজ’- এরকম বিভিন্ন শিরোনামে ভাব আদান-প্রদান হতো খাকি খামের চিঠিতে। একসময় এই খাকি খাম ডাক পিয়নরা পৌঁছে দিতেন প্রিয়জনদের কাছে শহর থেকে গ্রামে আর গ্রাম থেকে শহরের আনাচে কানাচে। সময়ের কালবদলে কেউ আর এখন চিঠি লেখে না প্রিয় মানুষের কাছে।
Advertisement
ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে ডাকপিয়নের তেমন কাজ নেই। তারপরও সরকারিসহ অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পৌঁছে দিতে হয় ডাকযোগের মাধ্যমে। আর এই পৌঁছে দেওয়ার সংশ্লিষ্ট কাজগুলো যারা করেন তারাই হলেন অবহেলিত ডাক বিভাগের ইডি কর্মচারী বা ডাক পিয়ন।
ডাক অফিস সূত্র জানায়, গাইবান্ধা জেলায় প্রায় ৩৯২ জন ইডি (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল) কর্মচারী রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা নামমাত্র ৪ হাজার ৪৬০ টাকা বেতনভাতায় চাকরি করছেন।
এই সামান্য অর্থ দিয়েই তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে সংসার চালিয়ে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে এই সামন্য টাকা দিয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই বেতনে চাকরি করে ঈদের আনন্দের সামান্য স্বাদও জোটেনি বলে দাবি তাদের।
Advertisement
গাইবান্ধার ইডি (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল) কর্মচারী আবু জাহিদ বলেন, দ্রব্যমূল্যর বাজার লাগামহীন। আমরা যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। ভালো কোনো খাবারও কিনে খেতে পারি না। বছরে ভালো একটা কাপড় কিনতে পারি না। এভাবে কী জীবন চলে? বেঁচে থাকাটাই আমাদের কঠিন হয়ে পড়েছে। এর আগেও ডাক বিভাগের ইডি কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেতন বৃদ্ধিসহ ছয়দফা দাবি তুলে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাদের দাবিগুলো হলো- ডাক বিভাগে ইডি প্রথা বাতিল, জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত, পর্যায়ক্রমে ইডি কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে সংযুক্ত, এক অভিন্ন নিয়োগ কাঠামো চালু, প্রতিটি ডাকঘরের ভবন নির্মাণ ও বিভাগীয় অফিসের মতো শাখা ডাকঘরগুলোতেও সকল সেবা চালু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইবান্ধা পোস্ট অফিসের এক কর্মচারী বলেন, জেলার ৩৯২ জন ডাক পিয়ন যাতায়াতের জন্য নামমাত্র একটা টাকা পান। এই টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলানো সম্ভব নয়। আমি যে রকম সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা পাই, এরকম ইডি কর্মচারীদেরও সুবিধা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
গাইবান্ধা পোস্ট মাস্টার বিল্পব কুমার দাস জাগো নিউজকে বলেন, ডাক বিভাগের ইডি কর্মচারীরা যে দাবিগুলো করছে সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।
এফএ/এমএস
Advertisement