দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা। চলতি (জুন) মাসের ২০ দিনেই বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ৫০০টির বেশি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশিদের বিও হিসাব কমেছে ৮০০টির বেশি।
Advertisement
দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমার পাশাপাশি স্থানীয় তথা দেশি বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাও কমেছে। চলতি (জুন) মাসে শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে প্রায় আড়াই হাজার। তবে চলতি বছরের ছয় মাসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১৫ হাজারের বেশি।
বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব নয়। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।
সিডিবিএল’র তথ্য অনুযায়ী, ২০ জুন শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৪টি, যা মে মাস শেষে ছিল ১৭ লাখ ৯১ হাজার ২২৮টি। এ হিসাবে জুন মাসের ২০ দিনে বিও হিসাব কমেছে ২ হাজার ৯৮৪টি।
Advertisement
২০২৩ সালের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ২০৪টি। এ হিসাবে চলতি বছর বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে বেড়েছে ১৫ হাজার ৪০টি।
সিডিবিএল’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৫টি, যা মে মাস শেষে ছিল ১৭ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৮টি। অর্থাৎ দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ২ হাজার ৪৯৩টি। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৬৫টি। এ হিসাবে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৩০টি।
আরও পড়ুন:
তবুও নেই এক লাখ কোটি টাকাঅপরদিকে, বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৫৪ হাজার ৫১১টি। মে মাস শেষে এ সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ৪৫টি। অর্থাৎ চলতি মাসের ২০ দিনে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৫৩৪টি। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৩৪৮টি। এ হিসাবে চলতি বছর বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৮৩৭টি।
Advertisement
বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগকারী আছেন, তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬৩টি। মে মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৪৫৮টি। অর্থাৎ পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব কমেছে ১ হাজার ৯৯৫টি।
অপরদিকে, বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ১৪৩টি। মে মাস শেষে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫টি। এ হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৩২টি।
এদিকে, বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৬৩৮টি। মে মাস শেষে এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৫৯৫টি। সে হিসাবে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ৪৩টি।
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬৩টি, যা মে মাস শেষে ছিল ১২ লাখ ৬০ হাজার ৪৯৩টি। অর্থাৎ একক নামে বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৩০টি।
বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৫ লাখ ১১ হাজার ১৪৩টি। মে মাস শেষে যৌথ বিও হিসাব ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ১৪০টি। অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৯৯৭টি।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. সায়েদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এনআরবি (বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারী) বিও হিসাবগুলো খোলা ছিল আইপিওকেন্দ্রিক। আইপিও’র বাইরে এনআরবি হিসাবগুলো থেকে বিনিয়োগ আসে না। সেকেন্ডারি মার্কেটে এসব বিও হিসাবের তেমন কন্টিবিউশন নেই।
তিনি বলেন, আইপিও’র নীতিমালা পরিবর্তন করার কারণে এখন মাল্টিপল অ্যাপলিকেশন করা যায়। ফলে খুচরা অ্যাকাউন্টের দরকার নেই। আগে অনেক অ্যাকাউন্ট খোলা হতো। এখন যেহেতু মাল্টিপল করা যায়, বেশি অ্যাকাউন্টের দরকার নেই। এনআরবি অ্যাকাউন্টগুলোর সেকেন্ডারি মার্কেটে তেমন কন্টিবিউশন নেই, সব প্রাইমারি মার্কেটে। এখন আইপিও আসছে খুব কম। অ্যাকাউন্ট মেইন্টেইন করে লাভ কি।
এমএএস/এসএনআর/এমএস