অব্যাহত দরপতনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। ঈদের পর লেনদেন হওয়া দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এতে দুদিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। এরপরও গত মার্চের তুলনায় ডিএসই’র বাজার মূলধন কম আছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি।
Advertisement
ঈদের পর শেয়ারবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও তার আগে দুই মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হয়। এতে ডিএসই’র বাজার মূলধন প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা কমে যায়। ফলে হতাশা নিয়েই ঈদ উদযাপন করতে যেতে হয় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের।
ঈদের পর শেয়ারবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি এখনো ফোটেনি। কারণ ঈদের আগে অব্যাহত দরপতন হওয়ায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বড় লোকসানের মধ্যে পতিত হন। এখনো অনেক বিনিয়োগকারী কোনো কোনো শেয়ারে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ লোকসানে রয়েছেন।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ঈদের আগে যে পরিমাণ লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে, সেই লোকসান কাভার করতে একটানা এক-দেড় মাস শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকতে হবে। তারপরও অনেক বিনিয়োগকারীর লোকসান পুরোপুরি কাভার হবে না।
Advertisement
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৪৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট এবং দ্বিতীয় দিনে বাড়ে ৮২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ দুদিনে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১২৬ পয়েন্ট।
সূচকের বড় উত্থান হওয়ার পাশাপাশি দুই কার্যদিবসেই দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসে ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঈদের পর দুদিনে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
ঈদের পর ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন বাড়লেও তার আগে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বাজার মূলধন কমে। গত ৩ মার্চ ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে ১২ জুন ডিএসই’র বাজার মূলধন ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকায় নেমে আসে। অর্থাৎ দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা দরপতনে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।
ঈদের আগের শেষ দুই কার্যদিবসেও শেয়ারবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তাতে ডিএসই’র বাজার মূলধন বাড়ে ৩ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঈদের আগে ও পরে মিলে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এরপরও ৩ মার্চের তুলনায় এখনো ডিএসই’র বাজার মূলধন ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা কম আছে। বাজার মূলধন কম হওয়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন
ঈদের পর ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার শেয়ারবাজারে সূচকের বড় লাফ, তলানিতে লেনদেনশরিফুল নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, আমার পোর্টফোলিওতে ১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট আছে। সবগুলোতেই লোকসানে রয়েছি। ঈদের পর দুদিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকার পরও এখন একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে লোকসান রয়েছে ৬৪ শতাংশ। বাকিগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশের ওপরে লোকসান আছে দুটিতে।
‘এছাড়া ৩টি লোকসান আছে ৪০ শতাংশের ওপর। ৩০ শতাংশের ওপরে লোকসান আছে ২টিতে। আর একটিতে লোকসান আছে ২৩ শতাংশের ওপরে। ২০ শতাংশের কম লোকসান আছে একটিতে। সব মিলিয়ে ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা দিয়ে কেন শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্য ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা লোকসানে রয়েছি।’
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছি। প্রথমদিকে কিছুটা লাভ পেলেও সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছি। গত দুই-আড়াই মাসে যে হারে বাজারে দরপতন হয়েছে, তাতে আমার মতো অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বড় লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। এই লোকসান থেকে কোনো দিনও বের হতে পারবো কি না জানি না। এখন আর লাভের আশা করি না, শেয়ার কেনা দামে আসলেই খুশি।
মিনাজুর রহমান নামের আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হয়েছে। এতে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরাই লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। এই লোকসান কাভার করতে কমপক্ষে এক মাস টানা বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের যে আচরণ তাতে এটা আশা করা মুশকিল। সুতরাং বাজারে যে ক্ষত হয়েছে, তা সহসা সারবে বলে মনে হয় না।
এমএএস/এমএইচআর/এমএস